অভিযুক্ত নিরাপত্তাপ্রহরীকে অপসারণ, কাজে ফিরলেন আন্দোলনরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা
নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নারী সহকর্মীকে হেনস্তার প্রতিবাদে ২৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি শেষে কাজে যোগ দিয়েছেন আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, জেলা সিভিল সার্জন ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের যৌথ বৈঠকে অভিযুক্ত নিরাপত্তাপ্রহরীকে চাকরি থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা কাজে যোগ দেন।
এর আগে গতকাল রোববার বেলা তিনটা থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিক বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে একজন নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক জেনারেল হাসপাতালে সকালের পালার দায়িত্ব পালন শেষে হোস্টেলে ফিরছিলেন। এ সময় হাসপাতালের রোহিঙ্গা ওয়ার্ডের নিরাপত্তাপ্রহরী আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী ওই চিকিৎসককে ‘হেনস্তা’ করেন। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে কর্মবিরতি শুরু করেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, কর্মবিরতি চলাকালে আজ সকালে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, জেলা সিভিল সার্জন ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে অভিযুক্ত বেসরকারি নিরাপত্তাপ্রহরী আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ ছাড়া শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের অন্যান্য দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়। আশ্বাস পেয়ে বেলা তিনটা থেকে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা কাজে যোগ দেন।
তবে অভিযুক্ত আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, হেঁটে যাওয়ার সময় অসাবধানতাবশত ওই শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁর ধাক্কা লাগে। তখন ওই নারী তাঁকে গালাগাল করেন। তাৎক্ষণিক তিনি তাঁকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবু ওই নারী তাঁকে চড়–থাপ্পড় দেন এবং পরে আরও কয়েকজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক তাঁকে একটি কক্ষে আটকে মারধর করেন। আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে অনিক বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কেউ ওই নিরাপত্তাপ্রহরীকে মারধর করেননি। ঘটনার সময় আশপাশের যাঁরা বিষয়টি দেখেন, তাঁরাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ব্যক্তিকে মারধর করেছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো গুরুতর জখম করা হয়নি।
জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক মো. হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি জানার পর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের অন্যান্য দাবিও মেনে নেওয়া হয়েছে। এতে তাঁরা দায়িত্বে ফিরতে রাজি হন এবং বেলা তিনটা থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ জানায়, ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা পান। কিন্তু তাঁদের ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। ভাতা দেওয়া হয় দুই-তিন মাস পর। এ ছাড়া একসঙ্গে পাঁচ-ছয়জন ইন্টার্ন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করলেও তাঁদের জন্য কোনো আলাদা শৌচাগার নেই। নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে হোস্টেলে যেতে হয়। যাতায়াতের পথে প্রায় সময় ইভ টিজিংয়ের শিকার হতে হয় তাঁদের। দীর্ঘদিন ধরে এসব বিষয়ে জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি।