পড়ে রইল তার শখের মোটরসাইকেল

কাজী তৌহিদুল আলম
ছবি: সংগৃহীত

মার্কেটের পাশে রাখা কাজী তৌহিদুল আলমের মোটরসাইকেল। সেটি নিজেই বাসা থেকে চালিয়ে ব্যক্তিগত কাজে চট্টগ্রাম নগরের মিমি সুপারমার্কেট এলাকায় এসেছিলেন তিনি। তবে সেটি আর চালিয়ে ঘরে ফেরা হয়নি তাঁর। তাঁকে যেতে হয়েছে হাসপাতালে, অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে। আজ শুক্রবার সকালে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন তৌহিদুল। এতে তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে শরীর থেকে।

ঘটনার পর তৌহিদুলকে উদ্ধার করে নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পরিবার। এ ঘটনায় আহত দুই শ্রমিক গফুর (২৮) ও নুর আলমকে (৩০) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিগত কাজে ছুটির দিনে নিজের মোটরসাইকেলটি নিয়ে মিমি সুপারমার্কেট এলাকায় এসেছিলেন তৌহিদুল। মোটরসাইকেলটি মার্কেটের নিচে রেখে পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এ সময় পাশের কেবিএইচ প্লাজায় তৃতীয় তলার দেয়ালের বাইরে এসি মেরামতের কাজ করছিলেন দুই শ্রমিক।

বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে এসি বিস্ফোরিত হয়। এতে এক শ্রমিক ছিটকে পড়েন পাশের আরেকটি বিপণিবিতানের দেয়ালে। আরেকজন ভবনের বাইরে থাকা বাঁশের বেষ্টনীর সঙ্গে ঝুলে ছিলেন আহত অবস্থায়। স্থানীয় ব্যক্তিরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসে তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এ সময় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায় তৌহিদুল আলমকে।

তৌহিদুল আলমের মোটরসাইকেল। এটি চালিয়ে ছুটির দিনে বাসা থেকে মিমি সুপার মার্কেটে এসে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি
জুয়েল শীল

তৌহিদুলের কাছে গিয়ে দেখতে পান, বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে শরীর থেকে। ডান পায়ের গোড়ালির ওপরের অংশে আঘাতের দাগ ও পায়ের পাতাও কেটেছে অনেকটা। এ সময় দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর দেওয়া হয় পরিবারকে।

পরিবার জানায়, কাজী তৌহিদুল আলম (৩৯) ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের আইটি বিভাগের কর্মকর্তা। তিনি পরিবার নিয়ে নগরের দেওয়ান বাজার এলাকায় নিরাপদ হাউজিং সোসাইটিতে থাকতেন। তাঁর বিয়ে হয়েছে এক বছর আগে। শুক্রবার ব্যক্তিগত কাজে মিমি সুপারমার্কেট এলাকায় গিয়েছিলেন। এরপর সেখানে দুর্ঘটনা ঘটে।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আহত তৌহিদুলের খালাতো ভাই শাহেদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। তাঁর মা-বাবাকে এখনো বিস্তারিত বলা হয়নি। তাঁর স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাঁকে শুধু দুর্ঘটনার কথা বলা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করব।’

কয়েক ফুট দূরে ছিটকে যায় যন্ত্রাংশ

তৌহিদুল যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখান থেকে কেবিএইচ প্লাজার দূরত্ব অন্তত পাঁচ থেকে ছয় ফুট। স্থানীয়রা জানান, বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই বিকট ছিল যে আশপাশের ভবনগুলো কেঁপে ওঠে শব্দে। বিস্ফোরণের এসির যন্ত্রাংশ। এ কারণেই আহত হন তৌহিদুল।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, মিমি সুপার মার্কেটের পাশে মোটরসাইকেল রেখে দাঁড়িয়েছিলেন তৌহিদুল আলম। ওই সময় বিকট শব্দে এসি বিস্ফোরিত হয়। এতে পাশের মার্কেটের সামনের চত্বরে ছিটকে পড়েন দুই শ্রমিক। আর বিস্ফোরিত এসি থেকে লোহার টুকরা ছিটকে পড়ে তৌহিদুলের পায়ে। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

বিস্ফোরণে উড়ে গেছে এসির পুরো যন্ত্রাংশ। ভেঙে গেছে সংস্কারের জন্য লাগানো মই। আজ দুপুরে হিলভিউ আবাসিক এলাকায়
জুয়েল শীল

বাকি আহত দুজনকে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাঁদের চিকিৎসা চলছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) নুরুল আলম।

বিকেল ৩টার সরেজমিনে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, কেবিএইচ প্লাজার তৃতীয় তলার বাইরে তিনটি এসির একটি বিস্ফোরণে দুমড়েমুচড়ে গেছে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় পাশের মার্কেটের বাইরের বড় এলইডি মনিটরে ভেঙে গেছে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় দুই শ্রমিক ওই কাচের দেয়ালের গায়ে ছিটকে পড়েছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। দুর্ঘটনার পর তৌহিদুলের শখের মোটরসাইকেলটি সেখানেই পড়ে ছিল। পরে সেটিকে পার্কিং-এ সরিয়ে নেন স্থানীয়রা।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে মার্কেট কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ এখনো হাতে পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।