যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুজনের রিমান্ড মঞ্জুর

জামাল হোসেন
সংগৃহীত

কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন হত্যা মামলায় বোরকা পরা শুটার দেলোয়ার হোসেনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামিদের পলায়নে সহায়তাকারী ইঞ্জিনিয়ার হারুন-উর-রশিদ গার্লস কলেজের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের প্রভাষক মো. সাহিদুল ইসলামের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার ৩ নম্বর আমলি (দাউদকান্দি উপজেলা) আদালতের বিচারক হাকিম কামাল হোসেন ওই আদেশ দেন। পরে এই দুই আসামিকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজেশ বড়ুয়া সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এদিকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে মামলার আসামি তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুল ইসলাম ও মো. শাহ আলমকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল রাত আটটার পর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম বাজার বাইতুন নুর জামে মসজিদ এলাকার সুমাইয়া কনফেকশনারির সামনে বোরকা পরা তিন দুর্বৃত্ত গুলি করে জামাল হোসেনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় ২ মে রাত সাড়ে ১১টায় নিহত জামাল হোসেনের স্ত্রী পপি আক্তার বাদী হয়ে দাউদকান্দি থানায় নয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ পর্যন্ত এজাহারনামীয় তিন আসামি ও এজাহারের বাইরে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা  হয়।

এর মধ্যে সাতজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ৯ মে তিন দিনের রিমান্ডে আনা হয় হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি শাহিনুল ইসলাম ও মো. শাহ আলমকে। আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের রিমান্ড শেষ হয়।

রিমান্ডে তাঁরা একেকবার একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। অসংলগ্ন কথা বলেছেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। আগামীকাল শুক্রবার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের এজাহারনামীয় আসামি মো. ইসমাইল, এজাহারের বাইরের আসামি মো. রবি ও মো. শাহপরানকে রিমান্ডে আনা হবে। পর্যায়ক্রমে দেলোয়ার ও সাহিদুলকেও পুলিশ রিমান্ডে আনবে।

এদিকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে আছেন দেবীদ্বার উপজেলার নবীয়াবাদ গ্রামের মাজহারুল ইসলাম, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, তিতাসের লালপুর গ্রামের মাইক্রোবাসচালক সুমন হোসেন ও দেবীদ্বার উপজেলার নবীয়াবাদ গ্রামের মো. মাসুদ। এর মধ্যে সুমন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।  

ডিবির ওসি রাজেশ বড়ুয়া বলেন, যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে যে তিনজন দুর্বৃত্ত গুলি করেন, তাঁদের একজন দেলোয়ার। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলাসহ ছয়টি মামলা আছে। সাহিদুল আসামিদের পলায়নে সহায়তা করেছেন। তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালতের বিচারক দেলোয়ারকে পাঁচ দিন ও সাহিদুলকে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দেবীদ্বার উপজেলার নবীয়াবাদ গ্রামের মো. মাসুদকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। এখনো রিমান্ডের শুনানির আদেশ হয়নি। গত বুধবার রাতে মাসুদকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ড শেষ হওয়া দুই আসামি শাহিনুল ইসলাম ও শাহ আলমের বক্তব্য সন্নিবেশ করে পর্যালোচনা করা হবে।

এদিকে মামলার এজাহারনামীয় তিতাসের জিয়ারকান্দি গ্রামের মো. সুজন ও মো. আরিফ নেপালে, বাদল দুবাইয়ে, শাকিল ভারতে, অলি হাসান সৌদি আরবে ও কালা মনির দেশে আত্মগোপনে আছেন। এর মধ্যে আরিফ ও কালা মনির বোরকা পরে জামালকে গুলি করেন। গুলি করার পর ঘটনাস্থল থেকে ফেরার পথে আরিফের বোরকার নেকাব খুলে যায়। কালা মনিরের হাত থেকে পিস্তল সড়কে পড়ে যায়।