মানবিক উদ্যোগে ভাটা, বাড়ছে শীতের দুর্ভোগ 

ভৈরবসহ আশপাশ এলাকায় ক্রমেই তাপমাত্রা কমছে। কিন্তু বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বড় পরিসরে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়নি। 

শীতে বাড়ছে শীতার্তদের দুর্ভোগ। গতকাল রাত পৌনে নয়টার দিকে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মেছবি: প্রথম আলো

গত মঙ্গলবার রাত ৯টা। পেশায় ভিক্ষুক ষাটোর্ধ্ব হাফিজ মিয়া গায়ে একটি কম্বল জড়িয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের পৌর শহরের চণ্ডীবের মধ্যপাড়ার একটি বাড়ির বারান্দায় শুয়ে কাঁপছিলেন। শীত মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় গরম কাপড় নেই তাঁর। গরম কাপড়ের আশায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ঘণ্টাখানেক রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান করেন। তাঁর ধারণা, মানবিক লোকজন শীতবস্ত্র বিতরণ করতে রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। কিন্তু এবার এখনো সেই রকম কারও দেখা পাননি তিনি। ফলে শীতে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে তাঁকে। 

হাফিজ মিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায়। ছয় মাস ধরে তিনি ভৈরবে ভিক্ষা করেন। রাতে ঘুমান কারও বাড়ির বারান্দায়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৈরবসহ আশপাশ এলাকায় ক্রমেই তাপমাত্রা কমছে। কিন্তু এই সময়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, মানবিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে বড় পরিসরে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়নি। সরকারি উদ্যোগও পর্যাপ্ত নয়। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন দুই সপ্তাহ আগে প্রতি ইউনিয়নে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ কম্বল দেওয়া হয়। কম্বলগুলো আকারে খুব বড় নয়, আবার ওজনেও হালকা। এই অবস্থায় শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বিশেষ করে ভ্রাম্যমাণ গরিব মানুষের দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। 

লিটন মিয়া ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। তাঁর ইউনিয়নে শীত মোকাবিলায় সরকারিভাবে তিনি ৩০০ কম্বল পেয়েছেন। ১০ দিন আগেই কম্বল বিতরণ শেষ। লিটন বলেন, এই কম্বল চাহিদার বিপরীতে খুবই কম। যে ব্যক্তির গরমের কাপড় চাইতে জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত আসার কথা নয়, এখন তিনিও আসছেন। কিন্তু হাতে কিছু নেই।  

একই উপজেলার শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের ভাষ্য, মাত্র ২০০ কম্বল দিয়ে তাঁকে একটি ইউনিয়নের গরিবের ঘরে শীত আটকাতে বলা হয়েছে। চাহিদার বিপরীতে এটি কেবল একটি ছোট সংখ্যা। বর্তমানে তিনি ঘরে বসে থাকতে পারছেন না। গরিব মানুষ চাল-ডাল চান না। চান কেবল ভারী একটি কম্বল। 

ভৈরবসহ আশপাশের এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জে এবার শীত জেঁকে বসেছে। নিকলীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এদিকে একসময় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘটা করে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হতো। রাজনৈতিক নেতারাও শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে থাকতেন। ব্যবসায়ী সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে এই উদ্যোগ চোখে পড়ত। কয়েক বছর ধরে সামাজিক উদ্যোগে ভাটা পড়েছে।  

সামাজিক উদ্যোগে ভাটা পড়ার কারণ জানতে কথা হয়, সামাজিক সংগঠক জনি আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, একসময় রাজনীতি ও সমাজকর্ম আলাদা ছিল। এখন সবকিছুর মধ্যে রাজনীতিকরণ হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশ বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছে না। ফলে এখন আর খুব বেশি মানুষ মানবিক উদ্যোগে যুক্ত হতে চান না। 

ইউএনও এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, এরই মধ্যে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভৈরবের জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। তবে শীত মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেসরকারি উদ্যোগ খুব প্রয়োজন।