রায়পুরায় সাংবাদিককে গুলির ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় সাংবাদিক মনিরুজ্জামানের (৪০) ওপর হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে নরসিংদী সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন হয়। পরে ক্ষুব্ধ সাংবাদিকেরা জেলা প্রশাসক বদিউল আলমের সঙ্গে দেখা করে এ হামলার বিচার দাবি করেন।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রায়পুরা পৌরসভার শ্রীরামপুর রেলগেট এলাকায় জনসমক্ষে মনিরুজ্জামানকে লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ মনিরুজ্জামান দৈনিক দেশ রূপান্তরের রায়পুরা উপজেলা প্রতিনিধি। মনিরুজ্জামানের অভিযোগ, স্থগিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রার্থী সুমন মিয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি অপর ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হাসানের (রুবেল) নেতৃত্বে তাঁর ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
নরসিংদী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ, হলধর দাস, জয়নাল আবেদীন, মো. ফারুক মিয়া, সুমন বর্মণ, শরিফ ইকবাল প্রমুখ। মানববন্ধনে নরসিংদী ও রায়পুরার শতাধিক সাংবাদিক অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সম্প্রতি রায়পুরা উপজেলা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাধারণ মানুষের ওপর হামলা, দখল ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরলেই সাংবাদিকদের ওপর চালানো হচ্ছে সন্ত্রাসী হামলা। দেশ রূপান্তরের সাংবাদিক মনিরুজ্জামানের ওপর তেমনটাই হয়েছে। প্রকাশ্যে গুলি করে ও হ্যামার দিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক মো. মনিরুজ্জামান জানিয়েছিলেন, উপজেলার শ্রীরামপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ীর দোকানে চুরি হওয়ার খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। তথ্য সংগ্রহ শেষে ওই দোকান থেকে বেরিয়ে উপজেলা কমপ্লেক্সে যাওয়ার সময় আবিদ হাসানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তাঁর পথ রোধ করে হামলা চালান। তাঁরা কাঠ ও হাতুড়ি দিয়ে দুই পায়ে উপর্যুপরি পেটাতে শুরু করেন। সড়কে লুটিয়ে পড়ার পরই একজন পিস্তল বের করে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি চালান। দুটি গুলি তাঁর হাতে ও পায়ে বিদ্ধ হয়।
হামলার পর রক্তাক্ত অবস্থায় সাংবাদিক মনিরুজ্জামানকে সড়কে ফেলে সন্ত্রাসীরা চলে গেলে উপস্থিত লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। এ সময় তাঁকে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। সেনাসদস্যরা খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন। তাঁদের সহযোগিতায় মনিরুজ্জামানকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পাঠানো হয়।
বুধবার বিকেলে সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে তাঁর শরীর থেকে গুলি অপসারণ করা হয়েছে। তবে হ্যামার দিয়ে পেটানোর কারণে তাঁর হাত, পা ও মাথা থেঁতলে গেছে এবং হাড় ভেঙে গেছে। তাঁর সুস্থ হতে বেশ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে থাকায় মামলা করতে দেরি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন বলেন, সাংবাদিক মনিরুজ্জামানের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত তাঁর পরিবারের সদস্যরা কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। লিখিত অভিযোগ পাওয়ামাত্রই তা মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।