ঝালকাঠিতে শাহজাহান ওমরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল বিএনপি, কুশপুত্তলিকা দাহ
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির সাবেক নেতা মেজর (অব.) শাহজাহান ওমরের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঝালকাঠি শহরের পশ্চিম চাঁদকাঠি এলাকায় এ কুশপুত্তলিকা পোড়ান বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় নেতা-কর্মীরা শাহজাহান ওমরকে ‘মীর জাফর’, ‘বেইমান’ বলে আখ্যায়িত করে স্লোগান দেন।
এদিকে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শাহাদাৎ হোসেন এক ভিডিও বার্তায় শাহজাহান ওমরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। আজ সকালে ওই ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা ঝালকাঠি জেলা বিএনপি তাঁকে (শাহজাহান ওমর) অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। নৌকার মাঝি হওয়ায় ঝালকাঠিবাসী তাঁকে ধিক্কার জানাচ্ছে। এরই মধ্যে তাঁকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।’
শাহাদাৎ হোসেন আরও বলেন, ‘ঝালকাঠি জেলা বিএনপিসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি জঞ্জালমুক্ত হয়েছে। শাহজাহান ওমর দলের জন্য কখনোই কাজ করেননি। তিনি দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে রাখতেন। সুবিধা পেতেই তিনি দলে ছিলেন। দলের মন্ত্রী-এমপি থাকাকালে দলের পদ-পদবি ব্যবহার করে নানা ফায়দা লুটেছেন। সব সময় দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন তিনি।’
ঝালকাঠি শহরের পশ্চিম চাঁদকাঠি এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা শাহজাহান ওমরকে ‘মীর জাফর’, ‘বেইমান’ বলে আখ্যায়িত করে স্লোগান দেন।
মাত্র এক দিন আগে গতকাল বৃহস্পতিবার শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগপর্যন্ত তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতার জন্য বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন। তিনি বিএনপির সরকারের সময় আইন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
এদিকে ঝালকাঠি-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনকে শুরুতে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তিনিও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে গতকাল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনার সই করা যে চিঠি দেওয়া হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে, তাতে শাহজাহান ওমরকে নৌকা প্রতীক দিতে বলা হয়েছে।
বজলুল হক হারুন ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করে এ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। গত সংসদ নির্বাচনে বজলুল হক হারুন নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫২৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অধীনে বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান ওমর ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ৬ হাজার ১৫১ ভোট।
শাহজাহান ওমরের হঠাৎ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি তাঁর নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও মানতে পারছেন না। এ ব্যাপারে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ এইচ এম খায়রুল আলম সরফরাজ আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এবার শুরু থেকে সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের সঙ্গে ছিলাম না। আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তারপরও যদি আনুষ্ঠানিক প্রতীক বরাদ্দের পর কেন্দ্র থেকে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে থাকতে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহলে আমরা দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেব। তবে শাহজাহান ওমর আমাদের সঙ্গে কথা বলে যোগ দিলে ভালো হতো। তিনিও আমাদের কিছু বলেননি, দলও আমাদের কিছু জানায়নি।’
শাহজাহান ওমরের এভাবে দল পাল্টানোয় রাজাপুরের স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন গতকাল রাত আটটার দিকে উপজেলার বাগরি এলাকার তাঁর বাসভবনে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। বিএনপির নেতা নাসিম আকন বলেন, ‘আমরা নেতা-কর্মীরা তাঁর হাতে-পায়ে ধরেছি। তাঁকে বুঝিয়েছি, আপনি জীবনে সবকিছু পেয়েছেন এখন দলের সঙ্গে বেইমানি করবেন না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, তিনি দল ত্যাগ করে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অন্যায় করেছেন। বেইমানি করেছেন।’
রাজাপুর বাইপাস মোড়ে উপজেলা বিএনপি কার্যালয় ছিল শাহজাহান ওমরের জমিতে। সেখান থেকে বিএনপির সাইনবোর্ড ও ব্যানার–ফেস্টুন নামিয়ে ফেলা হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, এই কার্যালয় এখন শাহজাহান ওমরের নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে।