স্তিমিত আলো, কাঠের কোটরে বসানো দেব-দেবীর হাতে আঁকা অবয়ব। দেব-দেবীর ঠিক নিচে, কাঠের ওপর সমান্তরাল কারুকার্য। মণ্ডপের মাঝবরাবর প্রধান প্রতিমা। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
চট্টগ্রাম নগরের টেরিবাজারের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপূজার মণ্ডপে আজ মঙ্গলবার যখন যাই, তখন ঘড়ির কাঁটা বেলা তিনটার ঘরে। শেষ মুহূর্তে চলছিল সাজসজ্জার ব্যস্ততা। প্রথাগত নকশার বাইরে গিয়ে এই মণ্ডপে থিম বা ভাবনা ধরে সাজসজ্জা হয়েছে। এবারের থিমের নাম ‘আনন্দী’। মণ্ডপেও ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দধারা। শিশুরা দারুণ উচ্ছ্বসিত।
টেরিবাজার বাই লেন পূজা উদ্যাপন পরিষদের এই মণ্ডপ নকশা করেছে চিত্রকল্প ইভেন্ট। চিত্রকল্পের কর্ণধার জুয়েল দত্ত ও তন্ময় দাশ জানালেন, পূজা মানেই উৎসব। উৎসবের অনুষঙ্গ হলো আনন্দ। তাই থিমের নাম আনন্দী। এই আনন্দধারা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনাতেই মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পেইন্টিং, কাঠের ফ্রেম, থার্মোকল, কাপড় ও নানা রং।
গতানুগতিক ধারা ভেঙে থিম ধরে মণ্ডপ সাজানো চট্টগ্রামে প্রায় দুই যুগ আগে শুরু হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে আছে হাজারী লেনের নাম। তারা কখনো অগ্ন্যুৎপাতে রোমান সাম্রাজ্যের পম্পেই নগরের ধ্বংস ও পুনরুত্থান দেখিয়েছে। আবার কখনো অসুর বধের আখ্যান তুলে ধরে সাড়া জাগিয়েছে। গত বছর এই মণ্ডপে পূজার থিম ‘প্রাণ-প্রকৃতির টানে’। ব্যস্ত নগরের বুকে তাঁরা ফিরিয়ে এনেছেন সবুজ-শ্যামল গ্রামের নানা রূপ।
এবার সেখানে গিয়ে দেখলাম, অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা নানা রূপে হাজির হয়েছেন। চতুর্ভুজ আকৃতিতে মণ্ডপটি সাজানো হয়েছে। গোলাকার ককশিটে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিমার নানা রূপ। সাজসজ্জায় সোনালি রঙের প্রাধান্য বেশি।
মণ্ডপের নকশা করেছেন শিল্পী দীপংকর আচার্য। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শাস্ত্রীয় মতে তিল ধর্মীয় মঙ্গলময় কাজে ব্যবহার করা হয়। আর দেবীর আরেক নাম উমা। দুইয়ে মিলে তিলোত্তমা নামটি বেছে নিয়েছি এবার।
মণ্ডপটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল শিশু ও তরুণেরা। ১৫ বছর বয়সী হৃদয় চন্দ্র দাশ ও তাঁর দুই বন্ধু কথায় কথায় জানাল, হাজারী গলি, টেরিবাজার ছাড়াও নগরের জামালখান কুসুমকুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, জে এম সেন হলসহ কয়েকটি মণ্ডপের সাজসজ্জা তাদের ভালো লেগেছে। তারা ইতিমধ্যে ঘোরাঘুরি শুরু করে দিয়েছেন।
উত্তর কাট্টলী রক্ষা কালীবাড়ির মণ্ডপে এবারের থিম ‘মায়ের কোলে জগৎ দেখা/ বিশ্বে ফিরুক শান্তি রেখা’। মণ্ডপটি দোতলা। দেয়ালজুড়ে আলোর নাচন। জানালায় উঁকি দেয় কোনো এক মা। টিন, কাঠ, বাঁশ, বেড়াসহ নানা উপকরণে সাজানো ঘরটি।
থিমের ব্যাখ্যা দিয়ে সুহৃদ সংঘের সভাপতি টিটন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, দোতলা ঘরটি বৃদ্ধাশ্রমের প্রতীক। জানালায় একমনে তাকিয়ে থাকা মায়েরা প্রহর গুনছেন। এর মধ্যে দেবী দুর্গার আগমনে ঝলমলিয়ে উঠেছে উঠান।
আগামীকাল বুধবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরের ২৯৩টি মণ্ডপে শেষ সময়ে তুলির আঁচড় দিচ্ছেন শিল্পীরা। মণ্ডপে নিরাপত্তার বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, আনন্দঘন পরিবেশে পূজা উদ্যাপন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বিঘ্নে উৎসব শেষ হবে।