কলাপাড়া–মির্জাগঞ্জে টর্নেডোতে অন্তত ১৫টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত, আহত ৩

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার তাহেরপুর গ্রামে টর্নেডোতে এক বাসিন্দার বসতঘরের চালের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের তাহেরপুর গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোতে অন্তত সাত-আটটি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া এ উপজেলায় টর্নেডোর আঘাতে শতাধিক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এদিকে মির্জাগঞ্জে টর্নেডোতে সাতটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় ঘরচাপায় তিনজন আহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কলাপাড়া ও মির্জাগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে।
কলাপাড়া উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে কলাপাড়ায় আজ সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টি ও দমকা বাতাস বইছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে হঠাৎ টর্নেডো আঘাত করে সাগরপাড়ের তাহেরপুর গ্রামে। এতে ওই গ্রামের মো. বেল্লাল হাওলাদার, রুবেল পাহলান, বাবুল সরদার, জাহিদুল ইসলাম, আবু তালেব, নজির সরদার ও বিধবা নারী মহিমা আক্তারের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামের এই বাসিন্দাদের ঘরের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রুবেল পাহলানের ঘরের চাল উড়ে পাশের আরেকটি বাড়ির উঠানে গিয়ে পড়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. তুহিন খান বলেন, টর্নেডো কোনো ঘরের চাল, আবার কোনো ঘরের বেড়া উড়িয়ে নিয়ে গেছে। আবার কোনো ঘরের ওপর গাছ পড়ে ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাবুল সরদার, রুবেল পাহলান, মহিমা আক্তার ও বেল্লাল হাওলাদারের ঘর।

তুহিন খান আরও বলেন, তাঁর নিজের অন্তত ৩০টি রেইনট্রি, চাম্বলগাছসহ টর্নেডোর আঘাতে গ্রামের শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। এ ছাড়া তাঁদের গ্রামের বিদ্যুতের দুটি খুঁটিও উপড়ে পড়েছে। অনেক বাড়ির বিদ্যুৎ–লাইনের ওপর গাছপালা ভেঙে পড়ায় বিদ্যুতের মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিধবা নারী মহিমা আক্তার বলেন, ‘আমি বাড়ির উডানেই আছেলাম। হুনি শোঁ শোঁ শব্দ। এর মধ্যেই সবকিছু ভাইংগ্যা লইয়া গ্যাছে। আমার থাকার বসতঘরটি পুরাই ভাইংগ্যা গ্যাছে। এহন আমার ঠাঁই নেয়ার মতো কোনো জায়গা নাই।’

তাহেরপুর গ্রামের ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচির (সিপিপি) দলনেতা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। এর মধ্যে সকাল ১০টার কিছু আগে হঠাৎ আমাদের গ্রামের ওপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে যায়। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েকটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টর্নেডো মাত্র এক থেকে দেড় মিনিট স্থায়ী ছিল।’

কলাপাড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণসহায়তা দেব।’

মির্জাগঞ্জের কয়েক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল ১০টার দিকে উপজেলার দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের রানীপুর গ্রাম হঠাৎ হালকা বৃষ্টির প্রবল বেগে ঘূর্ণি বাতাস বয়ে যায়। এতে একই এলাকার হাওলাদার বাড়ি, পাশাপাশি মীরা বাড়ির পাঁচটি টিনশেড ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও দুটি আংশিক বিধ্বস্ত হয়। ঘরচাপায় রুমা বেগম, শামিরা ও ইশামনি। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

এ ব্যাপারে মির্জাগঞ্জের ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়েছে।