ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লাইনচ্যুত ট্রেনের পাঁচটি বগি উদ্ধার, বিলম্বে চলছে ট্রেন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার দারিয়াপুর এলাকায় কনটেইনার বহনকারী মালবাহী ট্রেনের লাইনচ্যুত সাতটি বগির মধ্যে আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পাঁচটি বগি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি দুটি বগিও উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট ও চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা অভিমুখী (আপ লাইন) রেলপথ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী (ডাউন লাইন) রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। একটি মাত্র (ডাউন) লাইন সচল থাকায় প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের পরিবর্তে কিছুটা বিলম্বে চলাচল করেছে।
স্থানীয় লোকজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী কনটেইনার বহনকারী ট্রেনটি দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে সদর উপজেলার দারিয়াপুর এলাকায় পৌঁছালে সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে ঢাকা অভিমুখী রেলপথে (আপ লাইন) ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে পাশে থাকা ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট অভিমুখী রেলপথ (ডাউন লাইন) দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বিকেল পাঁচটার দিকে আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোশারফ হোসেন ও রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত স্টেশনমাস্টার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি থাকলে রেললাইন বেঁকে যেতে পারে। গতকাল লাইনচ্যুত হওয়ার সময় রেললাইনের তাপমাত্রা ৪৬ থেকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে রেললাইন বেঁকে যাওয়ায় মালবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।
আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে রেললাইনে তাপমাত্রার পরিমাণ সব সময়ই বেশি থাকে। এ কারণে গতি কমিয়ে ট্রেন চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ১১ এপ্রিল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথে এ রকম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গতি কমিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। যত দিন তাপমাত্রা বেশি থাকবে, এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে। তাপমাত্রার তীব্রতার কারণে রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশে সব আন্তনগর ও লোকাল ট্রেনকে সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার গতিতে চালাতে লোকোমাস্টারদের নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আর মালবাহী ট্রেনগুলোকে ৩০ কিলোমিটার গতিতে চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ের স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত মাস্টার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কনটেইনার ট্রেনের ২৮টি বগি অতিক্রম করার পর ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে ৫০০ মিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও ট্রেনের চলন্ত রেললাইনের সঙ্গে চাকার ঘর্ষণের ফলে লাইন বেঁকে যাওয়ায় বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০টি স্লিপার ভেঙে গেছে। বেঁকে গেছে লাইন।
আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মনিরুল ইসলাম সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, লাইনচ্যুত হওয়া ৭টি বগির মধ্যে ৫টি বগি উদ্ধার করা হয়েছে। আরও দুটি বগি উদ্ধার করতে ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগবে। বগি উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে রেললাইনও মেরামত করা হয়েছে। সব কটি বগি রেললাইনে উঠে গেলে লাইন চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে।