নাসিরনগরে নৌকাডুবিতে এক ভাইয়ের মৃত্যু, আরেক ভাইসহ আহত ১৫

নৌকাডুবি
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার লঙ্গন নদের তীরে যাত্রীবাহী নৌকা ডুবে আকিজুল ইসলাম (৩) নামে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আকিজুলের ভাইসহ অন্তত ১৫ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নাসিরনগর ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের পেছনের লঙ্গন নদের তীরের নৌকাঘাটে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আকিজুল গোয়ালনগর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। নৌকায় আকিজুলের সঙ্গে তার মা সেলিনা বেগম ও আরেক ভাই এমদাদুল ইসলামও (২) ছিল। আহত এমদাদুলকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয় লোকজন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে যাত্রীবাহী একটি নৌকা নাসিরনগর উপজেলা সদরের ফায়ার সার্ভিসের পেছনে লঙ্গন নদের তীরের ঘাটে অবস্থান করছিল। উপজেলা সদর থেকে একই উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রীরা মালামাল নিয়ে নৌকায় ওঠা শুরু করেন। এ সময় কিছু যাত্রী হাঁস ও মুরগির ফিডের বস্তা ইঞ্জিনচালিত ওই নৌকার ওপরে নিয়ে রাখেন। অতিরিক্ত মালবোঝাইয়ের কারণে এই নৌকার মাঝি অন্য আরেকটি নৌকা ডেকে আনেন।

পরে নৌকার ওপর থেকে মালামাল অন্য আরেকটি নৌকা তুলতে থাকেন ওই মাঝি। এ সময় চাতলপাড় থেকে ছেড়ে আসা অন্য একটি নৌকা ঘাটে থাকা যাত্রীবাহী নৌকাটিকে ধাক্কা দেয়। পরে বাধাঁ থাকা অবস্থায় যাত্রীবাহী নৌকাটি ঘাটেই ডুবতে শুরু করে। খবর পেয়ে পাশে থাকা নাসিরনগর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাত্রীদের উদ্ধার করেন। নৌকার ভেতরে থাকা দুটি শিশুকে উদ্ধার করে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু আকিজুলকে মৃত ঘোষণা করেন। নৌকা থেকে লাফিয়ে নামার সময় অন্তত ১৫ জন যাত্রী আহত হন। আহত ব্যক্তিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।  

নিহত আকিজুলের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি গোয়ালনগরে যেতে নৌকায় উঠি। মালামালের বস্তা নৌকার ওপর থেকে আরেকটি নৌকায় তুলছিল মাঝি। সে সময় আরেকটি নৌকার ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়।’
নৌকায় থাকা নাজমুল হাসান নামের একজন যাত্রী বলেন, ‘আমরা ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময় অন্য একটি নৌকা ধাক্কা দিলে আমাদের নৌকাটি ডুবে যায়। আমার সঙ্গে অনেক মালামাল ছিল। সব ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।’

নাসিরনগর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা (লিডার) মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আরেকটি নৌকার ধাক্কার কারণে যাত্রীবাহী নৌকাটি ডুবে যায়। খবর পাওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে যাই। দুটি শিশুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে একটি শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। অপর শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। নৌকাটি উদ্ধার করে ওপরে তোলা হয়েছে।’

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল্লা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, লঙ্গন নদের তীরেই নৌকাটি বাঁধা ছিল। নৌকার ওপর হাঁস ও মুরগির খাবার তুলেছিলেন কয়েকজন যাত্রী। নৌকাটি উপজেলার গোয়ালনগরের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা ছিল। নৌকার মাঝি আরেকটি নৌকা ডেকে এনে মালামাল ওই নৌকায় তুলছিলেন। সে সময় আরেকটি নৌকার ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকাটিতে ২০-২৫ জন যাত্রী ছিল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম জানান, নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। নৌকাটি উদ্ধার করা হয়েছে।