শান্তির বার্তা নিয়ে ২ হাজার কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশে ৫২ বিদেশি
শান্তির বার্তা নিয়ে দুই হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন ৫২ বিদেশি। নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের মহারাষ্ট্রের আহম্মেদনগর থেকে সাইকেল চালিয়ে তাঁরা বাংলাদেশে আসেন।
বাংলাদেশের গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ও ভারতের স্নেহালয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে যুব শান্তি শিবিরে (ইয়ুথ পিস ক্যাম্প) যোগ দিতে তাঁরা নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী যাচ্ছেন।
আজ বুধবার সকালে দলটি শরীয়তপুর থেকে নোয়াখালীর উদ্দেশে যাত্রা করেছে। দলে ভারতের মহারাষ্ট্র, ওডিশা, কেরালা, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার প্রদেশের ৫০ জন নাগরিক ও ২ জন ব্রিটিশ নাগরিক আছেন। তাঁরা ১৪ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের আহম্মেদনগর থেকে সাইকেলে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হন। ৩০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে শান্তি শিবিরে যোগ দেবেন।
গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের কর্মকর্তারা জানান, সোনাইমুড়ীতে অনুষ্ঠেয় যুব শান্তি শিবিরে বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ ১২টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। তাঁদের মধ্যে ভারত ও যুক্তরাজ্যের ৫২ জন মহারাষ্ট্রের আহম্মেদনগর থেকে সাইকেলে বাংলাদেশে এসেছেন। ২২ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে তাঁরা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। দলটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। গতকাল মঙ্গলবার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দলটি পদ্মা নদী ও সেতু ও ঘুরে দেখেন। রাতে শরীয়তপুরে একটি বেসরকারি সংস্থার অতিথিশালায় রাত্রিযাপনের পর আজ সকালে নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা করেন।
ভারত ও যুক্তরাজ্যের ওই দলটিতে ১৪ বছরের কিশোর থেকে ৭০ বছর বয়সী নাগরিকও আছেন। নারী আছেন ১১ জন। একসঙ্গে তাঁরা ৩৬ জন সাইকেল চালান। কেউ ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি বসে বিশ্রাম নেন। দলটির সঙ্গে সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন ব্রিটিশ নাগরিক নিকুলাকস পকস ও তাঁর স্ত্রী লরেন হজ। তাঁদের সঙ্গে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের একটি মেডিকেল দল ও একটি পথপ্রদর্শক দল আছে। শরীয়তপুর সাইকেলিস্টের চারজন সদস্য তাঁদের অভ্যর্থনা জানিয়ে চাঁদপুর ফেরিঘাটে পৌঁছে দেন।
ভারতের ওডিশা রাজ্যের কলেজছাত্রী পূজা। জাতীয় যুব শান্তি শিবিরে যোগ দিতে তিনি সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। গতকাল টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে তিনি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মহাত্মা গান্ধী তাঁদের জাতির পিতা। ভারতীয়দের কাছে তিনি পবিত্র নাম। তেমনি বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। ওনার স্মৃতিতে তাঁরা সম্মান জানিয়েছেন।
পূজা বলেন, ‘বাংলাদেশে এসে খুব ভালো লাগছে। সাইকেল চালিয়ে আসার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি কাছ থেকে দেখা। আমরা বিভিন্ন জায়গায় সাইকেল থামিয়েছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। মানুষের প্রতি আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এই যাত্রায় বাংলাদেশ সম্পর্কে পজিটিভ একটি ধারণা পেয়েছি।’
ভারতের মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা মধুসূদন দাস পেশায় সংগীতশিল্পী ও বেসরকারি সংস্থার কর্মী। মধুসূদন বলেন, ‘বাংলাদেশে এসে আমরা অভিভূত। এখানকার মানুষ খুবই অতিথিপরায়ণ। যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, তারাই একধরনের মায়ার বাঁধন সৃষ্টি করেছেন। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করেছে। সুযোগ পেলে আবার বাংলাদেশে আসব।’
গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের স্বেচ্ছাসেবক ও সাইকেলযাত্রার সমন্বয়ক মাহাবুন্নবি প্রথম আলোকে বলেন, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ও স্নেহালয়ার যৌথ আয়োজনে যুব শান্তি শিবির অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসীর মধ্যে বার্তা দেওয়া হবে—তারুণ্যের শক্তি ও অহিংসার মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান সম্ভব। মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টির জন্য সাইকেলযাত্রা। ভারতীয় নাগরিকেরা বিভিন্ন স্থানে যাত্রাবিরতি করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতে গান শুনিয়েছেন। দলটি ৩ অক্টোবর ঢাকায় গিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ৫ অক্টোবর ভারতে ফিরে যাবেন।