বিজয়নগরে যুবলীগের নেতাকে ছেড়ে দেওয়াসহ বিএনপির কর্মীদের গ্রেপ্তারে বিএনপির ক্ষোভ

বিজয়নগরের সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন বিএনপির দুই কর্মীকে ছাড়ার দাবিতে থানা চত্বরে জড়ো হন বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তোলাছবি: সংগৃহীত ‌

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় যুবলীগের নেতাকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়াসহ বিএনপির কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশের আচরণে ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতা–কর্মীরা। রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিএনপির নেতা–কর্মীরা দফায় দফায় থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বিএনপি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নাশকতার অভিযোগে গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটি দাউদপুর গ্রাম থেকে ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি সেলিম মৃধাকে আটক করে আউলিয়া বাজার ফাঁড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। এর পরপরই উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল মন্নাফ, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইয়াহিয়া খান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিশু মিয়া, ভিটি দাউদপুর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শামসু মিয়া, উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিবের পদ থেকে বহিষ্কার হওয়া লিটন মুন্সি, বিএনপি নেতা রেনু মিয়া, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ, জাহের মিয়া প্রমুখ ওই পুলিশ ফাঁড়িতে যান। তাঁদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরাও ছিলেন। রাত ৯টার দিকে সেলিম মৃধাকে বিজয়নগর থানায় নেওয়া হয়। তখন নেতা-কর্মীদের অনেকে থানায় যান। রাত ১টার দিকে মুচলেকা নিয়ে সেলিম মৃধাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার নোয়াবাদী এলাকা থেকে দিনমজুর সৈয়দ হোসেন (৭০) ও শাহ আলম (৫০) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রোববার বিকেলে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
যুবলীগ নেতাকে ছেড়ে দেওয়াসহ বিএনপির দুই কর্মী সৈয়দ হোসেন ও শাহ আলমকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা বিজয়নগর থানা চত্বরে জড়ো হন। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপির কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রতিবাদ জানান।

রোববার বিকেলে থানায় যান বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মহসিন আহমেদ ভূঁইয়া, সদস্যসচিব জাকির হোসেন, সদস্য রাষ্ট্রু মিয়া ও জয়নাল মিয়া মেম্বার, হরষপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান, উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি কাউসার আহমেদ প্রমুখ। তাঁরা দুটি ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাইদ খোকন বলেন, গত শনিবার দিবাগত রাতে যুবলীগের নেতা সেলিমকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। অথচ সব সময় বিএনপির সভা-মিছিলে আসা শাহ আলম ও সৈয়দ হোসেনকে শুধু শুধু ধরে নিয়ে এসেছে পুলিশ।
গত ২৭ আগস্ট বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এস এম রাষ্ট্র বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনায় থানায় একটি নাশকতার মামলা করেন। তিনি বলেন, ‘যাঁরা প্রকৃত আওয়ামী লীগ করে, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হোক। সাধারণ মানুষকে যেন হয়রানি না করে। গতকাল শনিবার এক শিক্ষককে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আর সন্ধ্যায় যুবলীগ নেতাকে আটক করে ছেড়ে দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সত্ত্বেও কোন কারণে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওসি বলছে, ওপরের নির্দেশে তাঁকে ছাড়া হয়েছে। আমরা ওপরের নির্দেশদাতার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেননি।’

উপজেলা বিএনপির সভাপতি মহসিন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, দলীয় কর্মকাণ্ডসহ যাঁরা আওয়ামী লীগ করেছেন, যাঁরা অপরাধী তাঁদের গ্রেপ্তার করা হোক। বিএনপির কর্মীদের গ্রেপ্তার করবে আর যুবলীগের সহসভাপতিকে ছেড়ে দেবে, এটা দুঃখজনক।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী প্রথম আলোকে বলেন, শাহ আলম ও সৈয়দ হোসেনকে সন্দেহভাজন হিসেবে ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা বিএনপির কর্মী কোথাও লেখা নেই।