৪ কোটি টাকার বেশি বিল বকেয়া, মানিকগঞ্জ পৌরসভার বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন

মানিকগঞ্জ পৌরসভার পানি শোধনাগারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পোড়রা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জ পৌরসভার চার কোটি টাকার বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় পৌর কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকা পানি পরিশোধনাগার ও বেশ কয়েকটি বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পবিস কর্তৃপক্ষ। পবিসের মানিকগঞ্জ উঁচুটিয়া কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আর্থিক সংকটের কারণে বকেয়া বিল হালনাগাদ করা যাচ্ছে না। বিগত মেয়রদের আমল থেকেই বকেয়া চলমান রয়েছে।

মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জ পৌরসভার মূল ভবন, পানি পরিশোধনাগার, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত পৌর সুপার মার্কেট, পৌর কাঁচাবাজার, পৌর টিনশেড মার্কেট ও সড়ক বাতিসহ বিদ্যুৎ–সংযোগের ৪৩টি হিসাব নম্বর রয়েছে। এসব হিসাব নম্বরের কোনোটিতেই নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয় না। এসব সংযোগের বিপরীতে পৌরসভার হিসাব নম্বরে প্রায় ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। একাধিকবার নোটিশ দেওয়ার পরও পৌর কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না। এ অবস্থায় বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ের কৌশল হিসেবে পৌর ভবনের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে পবিস। এ ছাড়া পৌরসভার অধীন দুটি পানি শোধনাগারের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

পবিস সূত্রে আরও জানা যায়, মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৪৩টি হিসাবের বিপরীতে গত মে মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল ও অন্য পাওনাদি বাবদ মোট ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪৭ টাকা বকেয়া আছে। এর মধ্যে পবিসের ৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার ৯৪১ টাকা, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই অথরিটির (ডেসা) কাছে বকেয়া ২৮ লাখ ৯০ হাজার ৭০৬ টাকা ও ট্রান্সফরমার ভাড়া বাবদ ৪৭ লাখ ৫৯ হাজার ৭০০ টাকা বকেয়া আছে।

পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলী বলেন, রাজস্ব–সংকটে পৌরসভার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে। এটা পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর থেকে চলে আসছে। কিছু কিছু করে বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। পবিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পৌরসভার সক্ষমতা অনুযায়ী বিল পরিশোধ করে সংযোগ চালুর ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌর সুপার মার্কেট, পৌর কাঁচাবাজার ও পৌর টিনশেড মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুৎ–সংযোগ না থাকায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পৌর সুপার মার্কেটের ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসা করেন পৌর এলাকার পশ্চিত সেওতা এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই মার্কেটে প্রায় ৩০০ দোকান আছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পুরো মার্কেটের ভেতরে অন্ধকার অবস্থা। প্রচণ্ড গরমে ক্রেতারাও আসছেন না। ব্যবসায়ীদের বিক্রি বন্ধ রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা বিদ্যুৎ–সংযোগ চান।
এদিকে পানি শোধনাগারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে এসব এলাকার বাসিন্দারাও পানির অভাবে বিপাকে পড়েছেন।

পবিসের মানিকগঞ্জ উঁচুটিয়া কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একাধিকবার নোটিশ দিলেও পৌরসভা বিল পরিশোধ করছে না। এ অবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পৌরসভার পরিশোধনাগার ও বেশ কয়েকটি বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বিল পরিশোধ করলে আবার সংযোগ দেওয়া হবে।