আহমদিয়াদের ওপর হামলার পর এখনো বাড়িতে বাড়িতে উড়ছে লাল-সাদা কাপড়
সড়কের পাশে সারি সারি বাড়িঘর। বাড়ির ফটকে বাঁশের লাঠির সঙ্গে ঝুলছে কাপড়চোপড়। কোনোটা লাল আবার কোনোটা সাদা। গত শুক্রবার বিকেলে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলার পর জ্বালিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। হামলার আগে ওই এলাকার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি চিহ্নিত করতে এসব লাল-সাদা কাপড় টাঙানো হয়েছিল।
আজ সোমবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে পোড়া ঘরবাড়ি। তার পাশে বিভিন্ন বয়সের মানুষের জটলা। অপরিচিত লোকজন দেখলেই তারা একেক করে সরে যেতে থাকেন। পঞ্চগড় সদর উপজেলার আহমদনগরের পরেই বোদা উপজেলার নতুন বন্দর। সেখানেও হামলা করে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। পাকা সড়ক ধরে এগোতেই কয়েকটি বাড়ির ফটকে টাঙানো লাল-সাদা কাপড় নজরে পড়ে।
নতুন বন্দর এলাকার বাসিন্দা জায়গুন বেগম জানান, যারা কাদিয়ানি না, তাদের বাড়িতে লাল বা সাদা কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়ার কথা ছড়িয়ে পড়ে। সেই কথা শুনে তাঁরাও বাড়িতে লাল বা সাদা কাপড় টাঙিয়ে দেন। রোববার সকালে সেসব কাপড় নামিয়ে নেওয়া হয়। এখনো কারও কারও বাড়িতে সেই কাপড় টাঙানোই রয়েছে।
পাকা সড়কের পাশে বাঁশের মাচা। সেখানে বসে ছিলেন বৃদ্ধ মো. শামসুদ্দীন। তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় বেশ কিছু আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন থাকেন। তাঁদের বাড়িতে হামলা হচ্ছে শুনে এলাকার অনেক বাড়িতে লাল-সাদা কাপড় টাঙিয়ে দেওয়া হয়। তবে আমি টাঙাইনি। সেসব বাড়িতে টাঙানো কাপড় এখনো রয়ে গেছে।’
শামসুদ্দীনের বাড়ির পাশে নাজিম উদ্দিনের বাড়ি। বাড়ির ফটকের ওপর বাঁশের লাঠির সঙ্গে এখনো ঝুলছে একটি লাল রঙের হাফ প্যান্ট ও একটি সাদা গেঞ্জি। তাঁর বাড়ির পাশে কিনার উদ্দিনের বাড়ির ফটকে ঝুলছে একটি সাদা রঙের স্যান্ডো গেঞ্জি। কিনার উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার আহমদনগরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এরপর এলাকার মানুষ নিজের বাড়িতে লাল বা সাদা কাপড় টাঙিয়ে দেন। সে সময় কে বা কারা এলাকায় ছড়িয়ে দেন, যারা আহমদিয়া নয়, তারা যেন বাড়ির সামনে লাল বা সাদা কাপড় টাঙিয়ে দেয়। হামলাকারীরা সেটা দেখলেই সেখানে হামলা করবে না। এরপর বাড়িতে বাড়িতে কাপড় উঠতে শুরু করে। তিনি আরও বলেন, এখন প্রতিদিনই এলাকায় হামলার গুজব ছড়াচ্ছে। হামলার হাত থেকে নিজের বাড়ি বাঁচাতেই এখনো টাঙানো কাপড়টি নামানো হয়নি। বলা তো যায় না, কখন কী হয়। পাশ থেকে ওই এলাকার বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, ‘কী করিমো? হামাক তো বাঁচিবা হবে?’
সেদিন পার্শ্ববর্তী ফুলতলা, শালশিড়ি ও সোনাচান্দি এলাকায়ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সেখানেও আহমদিয়া সম্প্রদায় নয়, এমন বাড়িতে বাড়িতে লাল-সাদা কাপড় টাঙানো দেখা গেছে।
এ বিষয়ে বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব আলী বলেন, ‘ইউনিয়নের কিছু বাড়িতে এমন কাপড় টাঙানো দেখা গেছে। আমরা সেগুলো নামিয়ে নিতে বলেছি।’