ময়মনসিংহে দাঁড়াতেই দেওয়া হয়নি আন্দোলনকারীদের

ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক কর্মসূচি পালন করতে পুলিশের সহযোগিতা চান। ওই সময় পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরে যেতে বলে। আজ সোমবার বিকেলে নগরের ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরেছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের নামতে দেওয়া হয়নি। আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু পুরো শহর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরও অবস্থান ছিল বিভিন্ন পয়েন্টে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘটিত ‘গণহত্যার বিচার, মিথ্যা মামলা ও হয়রানি’র প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি দেওয়া হয়। নগরের গাঙ্গীনারপার মোড়সংলগ্ন শহীদ ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে কর্মসূচির জায়গা নির্ধারণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক প্যানেল। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাদের জমায়েত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে বেলা তিনটার আগেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়।

বেলা পৌনে চারদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহসমন্বয়ক তানজিল হোসেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষার্থী ঐশ্বর্য সরকারসহ চারজন ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে যান। তাঁরা নিজেদের কর্মসূচি পালন করতে পুলিশের কাছে সহযোগিতা চান। ওই সময় পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরে যেতে বলে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশের সঙ্গে মিনিট পাঁচেক বাগ্‌বিতণ্ডা করে সেখান থেকে সরে যান। যাওয়ার সময় কর্মসূচি করতে না দেওয়ার প্রতিবাদ জানান তাঁরা।

ঐশ্বর্য সরকার বলেন, ‘আমাদের যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন, সেই রক্তের জবাব চাই। আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম, কিন্তু পুলিশ আমাদের সরিয়ে দিয়েছে। আমরা এ ঘটনায় ধিক্কার জানাই। ঢাকাসহ সারা দেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন চেক করে যে হয়রানি করা হচ্ছে, তার তীব্র নিন্দা জানাই। নাগরিক হিসেবে এটি তীব্র অসম্মানের। রাষ্ট্রের যে চুক্তি জনগণের সঙ্গে, তা ভঙ্গ করা হয়েছে।’

ময়মনিসংহ শহরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অবস্থান
ছবি: প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহের প্রধান সমন্বয়ক আশিকুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ আমাদের দাঁড়াতেই দেয়নি। তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান শিক্ষার্থীরা। আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি পালন করব।’

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহীনুল ইসলাম ফকির বলেন, ‘ছাত্রদের যে যৌক্তিক দাবি ছিল, সেগুলো সরকার মেনে নিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের নিয়মিত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারও করে নিয়েছে। কয়েক দিন আগে দুষ্কৃতিকারীদের মাধ্যমে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, জনগণ যেন স্বস্তির সঙ্গে তাঁদের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন, সে জন্য কয়েক দিন ধরেই পুরো শহরকে নিরাপত্তার চাদরে রেখেছি। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই আমরা এখানে টহল দিচ্ছি।’

এদিকে শুধু ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বর নয়, নগরের মিন্টু কলেজ এলাকা, টাউন হল মোড় এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, এপিবিএন, র‍্যাব ও বিজিবির টহল ও অবস্থান ছিল। নগরের মিন্টু কলেজ এলাকায় সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমানের সমর্থকদের অবস্থান ছিল। টাউন হল এলাকায় রওশন এরশাদের বাসার সামনের এলাকায় অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক শ নেতা-কর্মী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র মো. ইকরামুল হক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা।

মেয়র ইকরামুল হক বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি শতভাগ পূরণ করা হয়েছে। কেউ যদি সমাজে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে, তাহলে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, যেকোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে রুখে দাঁড়াতে হবে। সে জন্য সব উপজেলায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।