পঞ্চগড় সীমান্তে পড়ে ছিল গুলিবিদ্ধ যুবকের লাশ, বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক
পঞ্চগড়ে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা একটি এলাকা থেকে নুর আলম (৩০) নামের এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যদের গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন। নুর গরু চোরাকারবারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের মোমিনপাড়া এলাকার মেইন পিলারসংলগ্ন একটি চা–বাগানের পাশ থেকে বিজিবির সহায়তায় লাশটি উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর থানা-পুলিশ। নিহত নুর আলম বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের নুর নগর-বকশীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সকাল ১০টায় মোমানিপাড়া সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নীলফামারীর ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আসাদুজ্জামান হাকিম ও ভারতের ২১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সি এস টমার নেতৃত্ব দেন।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ মিঞা বলেন, গুলিবিদ্ধ লাশটি উদ্ধার করে সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সম্ভবত তাঁর বাঁ চোখের নিচে গুলি লেগে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, মোমিনপাড়া এলাকার শেষ সীমান্তে একটি চা–বাগানের পাশে লাশটি পড়ে আছে। লাশের কান ও মাথার পেছন দিক থেকে রক্ত ঝরছে। লাশের চারদিকে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন। ঘটনার খবর শুনে বিভিন্ন এলাকা থেকে লাশটি দেখতে শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করছেন। প্রথম দিকে লাশের পরিচয় পাওয়া না গেলেও স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে লাশটি নুর আলমের বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। তিনি মাঝেমধ্যে ওই সীমান্ত এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন বলে জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা। পরে নিহত ব্যক্তির পরিবারের লোকজনের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ।
স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১১টার পর মোমিনপাড়া এলাকার লোকজন ভারতীয় সীমান্তের দিকে একাধিক গুলির শব্দ শুনতে পান। পরে তাঁরা ভয়ে কেউ বের হননি। সকালে স্থানীয় ব্যক্তিরা বাড়ির উত্তর দিকে বাংলাদেশি অংশের একটি চা–বাগানের পাশের ফাঁকা স্থানে ওই লাশটি পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় কয়েকজন বিএসএফ সদস্য তাঁদের সীমানা থেকে ডাকাডাকি করলেও কেউ সেখানে এগিয়ে যাননি। সম্ভবত ভারতীয় গরু পারাপার করতে গিয়ে বিএসএফ ওই যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ছাড়া রাতেই ওই সীমান্ত থেকে বিজিবির ঘাগড়া বিওপির সদস্যরা একটি ভারতীয় গরু জব্দ করেছে বলে জেনেছেন।
মোমিনপাড়া এলাকার বাসিন্দা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘রাত ১১টার পর আমরা গুলির শব্দ শুনেছি, কিন্তু বের হইনি। পরে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শুনতেছি উত্তর দিকে নাকি একটা লাশ পড়ে আছে। পরে সেখানে গিয়ে লাশ দেখতে পাই। বিজিবির কয়েকজনের সঙ্গে আমরা বিএসএফের কাছাকাছি যাই। তবে যেখানে লাশ পড়ে ছিল, তার আনুমানিক ২০০ গজ উত্তরে (ভারতের আরও কাছে) একটা জায়গায় আমরা রক্ত দেখেছি। হয়তো সেখানেই মেরে ফেলে লাশটি বাংলাদেশের এদিকে রেখে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেখা করার সময় কয়েকজন বিএসএফ সদস্য আমাদের বলেন, রাতে নাকি ২০ থকে ২৫ জনের একটি দল বিএসএফের উপর হামলা করছে। এ সময় কয়েকজন আহত হয়েছেন। কিন্তু ওই যুবককে কে গুলি করেছে, তা জানায়নি বিএসএফ।’
নীলফামারীর ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আসাদুজ্জামান হাকিম বলেন, ওই যুবক ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন, এটা নিশ্চিত। এ ঘটনায় তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়ে পতাকা বৈঠক আহ্বান করেছেন। পতাকা বৈঠকে বিএসএফ জানিয়েছে, রাতে ২০-২৫ জন চোরাকারবারি গরু আনতে গেলে তারা বাধা দেয়। এ সময় চোরাকারবারিরা তাদের (বিএসএফের) ওপর হামলা চালিয়েছে। তখন তাঁরাও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছেন। এ ঘটনায় লিখিত প্রতিবাদ জানানোসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া চলছে।