যতই স্বাভাবিক বলা হোক, দেশ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে: জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুর–৩ আসনের প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করেন। শনিবার দুপুরে রংপুর নগরের পায়রাচত্বর এলাকায়ছবি: মঈনুল ইসলাম

প্রতীক বরাদ্দের পাঁচ দিন পর আজ শনিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি রংপুর-৩ (সদর) আসনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী।

আজ বেলা ১১টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের কবর জিয়ারত করেন জি এম কাদের। দুপুর ১২টায় মাওলানা কেরামত আলীর (রহ.) মাজার জিয়ারত ও মুন্সিপাড়া কবরস্থানে মা-বাবার কবর জিয়ারতের মাধ্যমে তিনি প্রচারণা শুরু করেন। এরপর সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ে নির্বাচনী কর্মিসভায় যোগ দেন। দুইটা পর্যন্ত তিনি দলীয় কর্মিসভা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভা ডেকেছিলাম। তৃণমূল পর্যায়ে সবাই নির্বাচন বর্জনের কথা বলেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে বলেছিল যে আপনার ওপর ভার দিলাম। আপনি যেটা ভালো মনে করবেন, সেটা করবেন। তারা আমাকে একটা গুরুদায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছিল। আমি কী বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কারণ, দেশে রাজনীতির পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছিল। কী ভালো, কী মন্দ। কোনটা করা উচিত, কোনটা মন্দ। আমার প্রতিটি স্টেপে মনে হচ্ছিল বিপদ। মনে হচ্ছিল, একটা খালের কিনার দিয়ে পার হচ্ছি। ঝড়ঝঞ্ঝা চলছে। সেখানে আমি যদি ভুল পদক্ষেপ নিই, তাহলে খাদের কিনারে পড়ে যেতে পারি।’

আরও পড়ুন

জি এম কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেখলাম, আস্তে আস্তে আন্দোলন কমে যাচ্ছে। মানুষজন নির্বাচনমুখী। আমাদের একটা উদ্দেশ্য ছিল, সংসদ ধরে রাখা। সংসদে থেকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে এবং পার্টির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নির্বাচনে আসা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে একটা উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ। সামনের দিনে কী হতে পারে, সেই কারণে মানুষ উৎকণ্ঠিত। যতই স্বাভাবিক বলা হোক, বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।’

যখন আমি বলছি নির্বাচন করব, তখন আমাকে হুমকি দেওয়া হয়, আমাকে হত্যা করা হবে। আমার ইচ্ছা, আমি আমার দলবল নিয়ে নির্বাচন করব কি করব না, এটা আমার ব্যাপার। আমি নিজের গাড়িতে করে ঢাকা থেকে সড়কপথে এসেছি। হত্যার হুমকি আছে, আমি কোনো প্রটোকল নেই নাই। মারা গেলে মারা যাব। আমি কোনো বডিগার্ড নিয়া চলব না।
জি এম কাদের, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ আসনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচন বৈধতার জন্য আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার প্রচেষ্টা নিয়েছে। আমাদের আলোচনার ভিত্তি ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। পেশিশক্তির হাত থেকে মুক্ত হতে হবে। এতে তারা রাজি হয়েছে। তারা কিছু প্রার্থী প্রত্যাহার করেছে। এটা এই নয় যে আসন ভাগাভাগি। কেননা আমরা আমাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করি নাই। এটা রাজনীতির কোনো সমঝোতা নয়। এটা পরিবেশ সৃষ্টির একটা উদ্যোগ।’

আরও পড়ুন

নিজের জীবনের ওপর হুমকি আছে জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘যখন আমি বলছি নির্বাচন করব, তখন আমাকে হুমকি দেওয়া হয়, আমাকে হত্যা করা হবে। আমার ইচ্ছা, আমি আমার দলবল নিয়ে নির্বাচন করব কি করব না, এটা আমার ব্যাপার।’ তিনি বলেন, ‘এখন নির্বাচন আচরণবিধিমালা সবাই ভঙ্গ করে বেড়াচ্ছে, কোনো খবর নাই। আমি নিজের গাড়িতে করে ঢাকা থেকে সড়কপথে এসেছি। কোনো সরকারি প্রটোকল নেই নাই। হত্যার হুমকি আছে, আমি কোনো প্রটোকল নেই নাই। মারা গেলে মারা যাব। আমি কোনো বডিগার্ড নিয়া চলব না।’

এর আগে রংপুর–৩ আসনে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী কর্মিসভায় বক্তব্য রাখেন জি এম কাদের। শনিবার দুপুরে রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জি এম কাদের এ পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘এখানে আমার শিশুকাল, কিশোরকাল, যৌবনকালের একটা বড় অংশ কেটেছে। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কেটেছে। আমার মা-বাবার কবরের পাশে মুন্সিপাড়া কবরস্থানে আমি আমার কবরের জায়গা কিনে রেখে দিয়েছি। আমি আপনাদের সন্তান। আমি আপনাদের পাশে সব সময় থাকব। মৃত্যুর পরেও আপনাদের সঙ্গে থাকব। রংপুরের মানুষ কতটা লাঙ্গলপ্রিয়, কতটা লাঙ্গলকে ভালোবাসে, এটি আমি চিরজীবন মনে রাখব। আমার পিঠের চামড়া দিয়ে হলেও কোনোভাবে ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়, আমার পরিবারের পক্ষেও সম্ভব নয়।’

আরও পড়ুন

জি এম কাদের আগামীকাল রোববার তাঁর নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় পথসভা করবেন। কর্মিসভায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির সভাপতিত্ব করেন। আরও উপস্থিত ছিলেন পার্টির কো-চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগর সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও রংপুর মহানগর জাপার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লোকমান হোসেন, সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

আরও পড়ুন