দলীয় কার্যালয়ের নামে রাজশাহীতে বিএনপির ‘দখলবাজি’

আওয়ামী লীগের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয় দখল করে বিএনপির ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যালয় করা হয়েছে। রাজশাহী নগরের পাঁচানি মাঠ এলাকায়ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির নিজস্ব দলীয় কার্যালয় নেই। নগরের মালোপাড়া এলাকায় একটি বাড়ির দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ভাড়া বাকি ও চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা কক্ষ দুটি ছেড়ে দিয়েছিল।

৫ আগস্টের পর সেই বাড়ি দখল নিয়ে আবার সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। এ নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরিয়ে নিলেও গত বুধবার নতুন করে আবার সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে।

এ ছাড়া ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের একটি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির একটি কার্যালয় দখল করে বিএনপির কার্যালয় করেছেন স্থানীয় নেতারা। ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয় হিসেবে কার্যালয় দুটি ব্যবহার হচ্ছে। বিএনপির নেতারা বলছেন, ‘স্থাপনা পড়ে ছিল, তাই ব্যবহার করছেন।’

রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হওয়া বাড়িটির নাম ‘কাবিল ম্যানশন’। চারতলা বাড়িটির দ্বিতীয় তলার দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে তারা কার্যক্রম চালাত।

বাড়ির মালিকের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৮০০ বর্গফুটের ঘর দুটি বিএনপি ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে মাসিক ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া নেয়। ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। বাড়ির মালিক আবদুল ওহাব পরের মাসে বাড়ি ছাড়ার জন্য নোটিশ দেন। পরে উকিল নোটিশও পাঠান। তারপরও বাড়ি না ছাড়লে গত ১৭ মে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলে বিএনপি বাড়ি ছেড়ে দেয়।

আরও পড়ুন

৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা আবার বাড়ির দখল নেন। এ নিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো অনলাইনে ‘ভাড়ার টাকা দিচ্ছে না, ভবনও ছাড়ছে না বিএনপি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন বিএনপি নেতারা ভবনটি থেকে সাইনবোর্ড সরিয়ে নেন। গত বুধবার তাঁরা আবার সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ভবনটির দখল নেওয়ায় বিপাকে পড়েছে বাড়ির মালিকপক্ষ।

ভবন দখলে নিয়ে করা রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রধান কার্যালয়
ছবি: প্রথম আলো

বাড়িটির মালিক আবদুল ওহাব সম্প্রতি মারা গেছেন। তাঁর ভাই শামস আলম দেশের বাইরে থাকেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ভবনটি পুরাতন হয়ে গেছে। এ জন্য নতুন করে নির্মাণের জন্য তাঁরা ভবনটি ভাঙতে শুরু করেছিলেন। বিএনপি আবার ফিরে আসায় নতুন করে বেকায়দায় পড়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের প্রায় ৩ লাখ টাকা ভাড়া বাকি পড়েছে। তারা কোনো টাকাও দেয়নি।

জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম আলোর প্রতিবেদনের পর তিনি সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলেছিলেন। সদস্যসচিব নতুন করে টাঙিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

ওই বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় চুক্তি করেছিলেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির তৎকালীন নেতা, বর্তমানে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান (মিনু)। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি যত দিন দায়িত্বে ছিলেন, ঠিকমতো ভাড়া পরিশোধ করেছেন। পরে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের ভাড়া পরিশোধ করার কথা। কেউ যদি জোর করে দখল করে, সেটি ঠিক নয়।

আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয় দখল

রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধের ওপরে স্থাপনা নির্মাণ বেআইনি হলেও নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় নির্মিত হয়েছিল বাঁধের ওপর। পাকা ভবনটির সামনে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়’ লেখা ছিল। ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীরা কার্যালয়টিতে অগ্নিসংযোগ করে। কয়েক দিন পর স্থানীয় বিএনপির পক্ষ থেকে সেটি নতুন করে রং করে দখলে নেওয়া হয়েছে। নাম পরিবর্তন করে লেখা হয়েছে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়’। প্রতিদিন বিকেলে কার্যালয়টি খোলা পাওয়া যায়। ভেতরে ছেলেদের ক্যারম খেলতে দেখা যায়।

জানতে চাইলে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক আলিম সরকার বলেন, ‘ওই কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী দলের নাম লেখা হয়েছে, এটা আমার জানা নেই। কয়েক দিন আগে রং করতে দেখেছি। কিন্তু আমাদের দলের নাম লেখা হয়েছে কি না জানি না।’

ওয়ার্কার্স পার্টির ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যালয় দখল করে বিএনপির স্থানীয় কার্যালয় করা হয়েছে। রাজশাহী নগরের বালিয়াপুকুর এলাকায়
ছবি: শহীদুল ইসলাম

ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব মো. রুবেল আলী মুঠোফোনে বলেন, তাঁরাই রং করে কার্যালয়ে বসছেন। আওয়ামী লীগের কার্যালয় দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, একটা স্থাপনা পড়ে ছিল, এখন তারা ব্যবহার করছেন। তিনি সামনাসামনি কথা বলার আমন্ত্রণ জানান।

নগরের বালিয়াপুকুর এলাকায় ওয়ার্কার্স পার্টির একটি পুরোনো কার্যালয় ছিল। সরকার পতনের পর একইভাবে কার্যালয়টি দখল করা হয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলীসহ অন্য নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যালয়টি জাতীয়তাবাদী দলের স্থানীয় কার্যালয় হিসেবে উদ্বোধন করেছেন। কার্যালয়ের ভেতরে এরশাদ আলীকে দলের নেতারা ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। কার্যালয়ের বাইরে এখনো কোনো সাইনবোর্ড টাঙানো হয়নি।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম (পাখি)। তিনি বলেন, ‘ওটা স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়ে নেতাদের সঙ্গে তিনিও গিয়েছিলেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয় কীভাবে বিএনপির কার্যালয় হলো জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ওটা জানি না। আমি মনে করেছি, বিএনপির পুরোনো কার্যালয়। হয়তো পড়েছিল, এখন নতুনভাবে উদ্বোধন করা হচ্ছে। সেই উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাতেই আমি নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি।’