নৌকার সমর্থকদের হামলায় নিহত লালন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ছিলেন
পিরোজপুর–১ (সদর–নাজিরপুর–ইন্দুরকানি) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সমর্থকদের হামলায় মারা যাওয়া লালন ফকির (২৭) বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ছিলেন।
লালন ফকির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল সোমবার রাতে এবং আজ মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
গত শনিবার রাতে লালন ফকিরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়। লালন পিরোজপুর পৌরসভার মধ্য ডুমুরিয়া মহল্লার আবদুল হান্নান ফকিরের ছেলে। তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তবে লালনের ঘনিষ্ঠজনরা দাবি করেছেন, বিএনপির স্থানীয় কিছু নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় তাঁকে কমিটিতে রাখা হতে পারে। তবে তিনি গত উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মজিবর রহমান শেখ গতকাল রাতে বলেন, ‘লালন ফকিরকে আমি চিনি না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘কমিটির সবাই তো মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন না। চিনব কীভাবে?’ আরেক সহসভাপতি মো. বাহাদুর শেখ বলেন, লালন ফকির একসময় স্বেচ্ছাসেবক দল করতেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে সদর উপজেলার রানীপুর গ্রামের বটতলা এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শ ম রেজাউল করিমের সমর্থক বাবু শেখের নেতৃত্বে একদল যুবক লালন ফকিরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। এতে তাঁর ডান পা, হাত ও বুকে গুরুতর জখম হয়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ওই রাতেই তাঁকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি মারা যান।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী শ ম রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘লালন ফকির জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। গত শনিবার তিনি আমার নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এরপর আমার সমর্থকদের সঙ্গে হাতাহাতির সময় তিনি আহত হন।’
এদিকে লালন ফকিরের মৃত্যুর পর গতকাল রাতে পিরোজপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদ উল্লাহর নেতৃত্বে শহরে মিছিল বের করেন দলটির নেতা–কর্মীরা। এরপর আজ সকালে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন মল্লিক ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদ উল্লাহর নেতৃত্বে শহরে মিছিল–সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লগের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে লালন ফকিরকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানানো হয়।
তোফাজ্জেল হোসেন মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, লালন ফকির শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আজমির হোসেন মাঝির কর্মী ছিলেন। শুনেছেন, তিনি যুবলীগের কর্মী ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আগে স্বেচ্ছাসেবক দল করতেন কি না, আমার জানা নেই। আমাদের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পক্ষে নির্বাচনে কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। এ জন্য তাঁর মৃত্যুতে আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল–সমাবেশ করেছি।’
আজ বেলা ১১টার দিকে উপজেলার মধ্য ডুমুরিয়া গ্রামে লালন ফকিরের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তাঁরা সবাই ঢাকায় আছেন। লালন ফকিরের বাড়ির সামনে কয়েকজন লোককে কবর খুঁড়তে দেখা গেল। সেখানে লালনের মামা আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে কথা হয়।
আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার বিকেলে শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে লালনসহ তাঁরা একটি সভায় যোগ দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম এ আউয়ালের পক্ষে ওই সভায় ইউপি চেয়ারম্যান আজমির হোসেন মাঝি তাঁদের নিয়ে যান। সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে সন্ধ্যায় লালন গরম পোশাক নিয়ে বটতলা বাজারে যান। রাত ৮টার দিকে বটতলা বাজারে বাবু শেখের নেতৃত্বে নৌকার ৩০–৪০ জন সমর্থক লালনের ওপর হামলা করেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আশিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় হত্যামামলা প্রক্রিয়াধীন। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা থেকে আটক করেছে।
প্রসঙ্গত, পিরোজপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল। নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি ২০০৮ ও ২০১৪ সালে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।