আল্লাহর ওয়াস্তে দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-দখলদারি থেকে সরে আসুন: উপদেষ্টা আসিফ
অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আপনারা আবার নতুন করে চাঁদাবাজি-দখলদারি করে বাংলাদেশের মানুষকে সেই দুঃশাসনের মধ্যে ঠেলে দেবেন না। আপনারা দেখেছেন চাঁদাবাজ-দখলদার-দুর্নীতিবাজদের কী অবস্থা হয়। যদি নিজেদের সেই পরিণতি না চান, তাহলে আল্লাহর ওয়াস্তে যত ধরনের দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-দখলদারির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, সেখান থেকে সরে আসুন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের প্রাণভরে ভালোবাসবে, স্বাগত জানাবে।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট গ্রোয়ার্স মার্কেট মাঠে এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আবদুল আহাদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফ মুস্তাফিজসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী জেলা-উপজেলার ছাত্র নেতারা।
শেখ হাসিনাকে ফেরত আনা ও ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচারের বিষয়ে অসিফ মাহমুদ বলেন, ‘ইতিমধ্যে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, জুলাই-২৪–এর অভ্যুত্থানে আমার ভাইদের যারা শহীদ করেছে, আহত করেছে, বাংলার জমিনে তাদের বিচার হবে। তাদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, যেন বাংলাদেশে আর কখনো কোনো স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদী সরকার মাথাচাড়া দিতে না পারে।’
সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে যাঁরা জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাঁরা বাংলাদেশের একটি কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সেই ত্যাগ যেন বৃথা না যায়, সে জন্য আমরা সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। ইতিমধ্যে সংস্কার কমিশনগুলো কাজ করছে। এত রক্তের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, সেই স্বাধীনতা যেন দীর্ঘ মেয়াদে এ দেশের জনগণ ভোগ করতে পারে, সে জন্য সরকার সব সেক্টরে সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আপনাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, আপনাদের মতামত, সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতা করবেন। একই সঙ্গে কেমন বাংলাদেশ চান, সে বিষয়ে আমাদের ও সংস্কার কমিশনগুলোকে জানাবেন, পরামর্শ দেবেন। বাংলাদেশের মানুষ যেমন বাংলাদেশ চান, আমরা সে রকম বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।’
রাজনৈতিক দলসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার পরে এ রকম একটা সময় বাংলাদেশে বিরলভাবে এসেছে। অবশ্যই নির্বাচন হবে এবং জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা যাবে। সে সুযোগ বাংলাদেশের মানুষের হাতে এসেছে। কোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী শক্তি অন্য কোনো পরাশক্তির সহায়তা নিয়ে যেন আবার পুনর্বাসিত না হয়, এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সবাইকে সংস্কার কমিশন ও সরকারকে সহযোগিতা এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানান তিনি।
উত্তরাঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম তৈরি ও বিপিএল আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘দিনাজপুরের দুটি উপজেলা ভ্রমণ করে রাস্তাঘাট-ব্রিজ-কালভার্ট দেখেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসবের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করা হবে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জনবল নিয়োগ করা হবে। খানসামা উপজেলায় শিক্ষার হার ৪৭ শতাংশ। যেহেতু খানসামা উপজেলা শিক্ষায় কিছুটা পিছিয়ে, সে জন্য উপজেলা পরিষদে একটি বিশেষ লাইব্রেরি স্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ৫০ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হবে। বিগত দিনে উন্নয়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক যে বৈষম্য করা হয়েছিল, আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তা আর হবে না। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় কম উন্নয়ন হয়েছে, সেগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন করা হবে।’
এর আগে সকালে কাহারোল উপজেলা ও খানসামা উপজেলা চত্বরে অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন উপদেষ্টা। সেই সঙ্গে উপজেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।