ভারতের সঙ্গে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার: আসিফ মাহমুদ
অতীতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ছিল। সেই অবস্থান থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সরে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চলমান থাকবে। তবে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আপস করে আন্তর্জাতিক কোনো সম্পর্কে আমরা বিশ্বাস করি না। তাই ভারতের সঙ্গে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার।’
আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে কুমিল্লার কোটবাড়ীর বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে (বার্ড) আয়োজিত এক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এসব কথা বলেন।
বার্ডের লালমাই মিলনায়তনে ‘টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন: আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও গ্রামীণ রূপান্তর’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। বার্ড এবং আফ্রিকান-এশিয়ান ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন এ কর্মশালার আয়োজন করে।
ভারতীয় অপপ্রচার নিয়ে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় আপনারা দেখেছেন, ইতিমধ্যে ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশে এসেছেন। প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ নিয়ে তাঁর বৈঠক হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দিয়েছে ভারত। তবে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষেরই কিছু বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। আমাদের দিক থেকে জানিয়েছি গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে এবং তিনি যে ভারতে বসে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করছেন, সেগুলো বন্ধ করতে। পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে অন্যান্য বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, জনপ্রতিনিধি ছাড়া স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এখন কর্মকর্তারা স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোয় দায়িত্ব পালন করছেন। এতে নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে অনেক বিঘ্ন ঘটছে। এরপরও তাঁরা মানুষের সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানও বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন জরুরি। তবে এখানে নির্বাচন কমিশনেরও প্রস্তুতির বিষয় আছে। এটা রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। তিনি এ নিয়ে কথা বলবেন। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে অন্যান্য কার্যক্রম শেষ করলে তাঁরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা ভাববেন।
কুমিল্লা বার্ডের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি এরই মধ্যে বার্ডের বিভিন্ন বিষয়ে জেনেছি। এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে শুনেছি। তদন্ত প্রতিবেদন এখনো আমার কাছে আসেনি। প্রতিবেদনে কারও অনিয়ম পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সামনে উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি উচ্চপর্যায়ে কথা বলেছি। তবে বিভাগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় জড়িত আছে। সেগুলোর কার্যক্রম শেষ হলে কুমিল্লা নামেই কুমিল্লা বিভাগ হবে।’
কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বার্ডের মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আফ্রিকান-এশিয়ান রুরাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (আর্ডো) গবেষণা বিভাগের প্রধান খুশনুদ আলী। বার্ডের সহকারী পরিচালক আবদুল্লা-আল-মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক ও বার্ডের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) আবদুল্লাহ আল মামুন ও কর্মশালা পরিচালক শিশির কুমার মুন্সী বক্তব্য দেন। এ সময় কর্মশালায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
বার্ড সূত্র জানায়, কর্মশালাটির উদ্দেশ্য টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনকে সামনে রেখে আফ্রিকান-এশিয়ান রুরাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (আর্ডো) সদস্যরাষ্ট্রসমূহের নীতিনির্ধারক ও আর্থিক সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তাদের পল্লী এলাকায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। ২ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এ কর্মশালায় শ্রীলঙ্কা, মিসর, ভারত, ঘানা, জাম্বিয়া, নামিবিয়া, গাম্বিয়া, পাকিস্তান, ওমান, মালয়েশিয়া, কেনিয়া, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১২টি দেশের ২০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অংশ নেন।