সহনশীল হয়ে সংস্কারকাজে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যাতে নির্বাচনব্যবস্থাসহ অন্যান্য সংস্কারকাজ সঠিকভাবে শেষ করতে পারে, সে জন্য অবশ্যই তাদের সময় দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে লালমনিরহাটে জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে ছয়টি কমিটি করেছে সংস্কারের জন্য। তারা কাজও শুরু করেছে। তার মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থাকে সংস্কার, সংবিধান সংস্কার ও অন্য বিষয়গুলো রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের একটু সহনশীল হয়ে এই সংস্কারের বিষয়গুলো যেন তারা শেষ করতে পারে, সেই সময়টুকু আমাদের তাদের দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের মানুষের সহনশীলতার অভাব আছে। সবাই মুহূর্তের মধ্যে ভাবছে, তিন মাসেই সবকিছু সুন্দর হয়ে যাবে। এত সোজা তো নয়, একটা ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বের করে নিয়ে আসা।’
বর্তমান সরকারের চরিত্র একটু ভিন্ন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটি বিপ্লবের পরে এই সরকার এসেছে এবং এই বিপ্লবের যারা প্রধান চালিকাশক্তি ছিল ছাত্ররা, তারা এই সরকারের সঙ্গে যুক্ত আছে। সুতরাং এর বৈশিষ্ট্য কিন্তু অন্যান্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো নয়। তাকে বিশ্লেষণ করতে হলে, পর্যালোচনা করতে হলে আমাদের সে দিকটি লক্ষ রাখতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ গত ১৫ থেকে ১৬ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলেছে। একটা ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়ে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে বিএনপিসহ অনেকগুলো রাজনৈতিক দল দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই ও সংগ্রাম করেছে। বিএনপির প্রায় ৭০০ নেতা-কর্মী গুম হয়েছেন, কয়েক হাজার প্রাণ দিয়েছেন এবং প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে প্রায় ছয় বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তো আছেই, সেই সঙ্গে গত ১৫ থেকে ১৬ বছরে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, সামাজিক-সব জায়গায় এই জঞ্জালগুলো সরিয়ে, সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের একটা ভিত্তি প্রস্তুত করার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে থেকে আমরা এই রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনের জন্য ৩১ দফা দিয়েছিলাম এবং সেই ৩১ দফার পক্ষেও আমরা আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি। এ জন্য এই সরকারকে অন্য সরকারগুলোর মতো দেখলে হবে না। তারা অন্তত একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারে। মানুষের আশাগুলো বাস্তবায়নের ভিত্তি তৈরি করতে পারে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি মনে করি, এই সরকার অত্যন্ত ভালোভাবে শুরু করেছে। কারণ, একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রশাসন, বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন, সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে তোলা, সেই সঙ্গে নির্বাচনের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। যারা ফ্যাসিবাদী শাসন করেছে, গণহত্যা করেছে, তাদের কারাগারে নেওয়া, আইনের আওতায় নিয়ে আসা, এই বিষয়গুলো তারা কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে করছে।’
সরকারের নতুন তিন উপদেষ্টার শপথসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে বিতর্কিত কাউকে যেন উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, যাতে সব বিষয় রাজপথে না নিয়ে গিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।’
আজ বেলা তিনটায় সদর উপজেলার বড়বাড়িতে শহীদ আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪ উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিবের (দুলু) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আউয়াল, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতারা।