ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার অভিযোগ, জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

বরগুনার পাথরঘাটায় ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন। আজ রোববার সকালে পাথরঘাটা শহরের শেখ রাসেল স্কয়ারেছবি : প্রথম আলো

বরগুনার পাথরঘাটায় ধর্ষণের শিকার হয়ে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী (১৩) আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আজ রোববার সকাল ১০টায় পাথরঘাটা পৌর শহরের শেখ রাসেল স্কয়ারে মানববন্ধন হয়েছে। চরদুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনেও একই দাবিতে দুপুর ১২টায় পৃথক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

শেখ রাসেল স্কয়ারে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদ পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সভাপতি কানিজ ফাতিমা। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মির্জা শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুনিরা ইয়াসমিন, সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের পাথরঘাটা উপজেলা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম, পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা প্রমুখ। চরদুয়ানী বাজারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন চরদুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বদরুল হুদা।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মারা যাওয়া ওই ছাত্রীর বাড়ি উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। গত ২৭ জুন তাকে কৌশলে স্থানীয় একটি লাইব্রেরি অ্যান্ড কসমেটিকসের দোকানে ডেকে নিয়ে যায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া আরেক মাদ্রাসাছাত্রী। সেখানে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীর পূর্বপরিচিত দুই তরুণ জোবায়ের হোসেন ও ফয়সাল হোসেন হঠাৎ এসে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির শাটার বন্ধ করে দেন। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক সাকিবুল ইসলাম বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেন। সেখানে জোবায়ের ও ফয়সাল ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনা বাজারে জানাজানি হয়ে গেলে ব্যবসায়ী সাকিবুল ইসলামকে ডেকে এনে তাঁর দোকান খুলতে বাধ্য করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। পরে কয়েকজন যুবক ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন। পরে ওই ছাত্রীকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর গত ২৮ জুন সকালে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই স্কুলছাত্রী। ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়েকে ওই দোকানে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে স্থানীয় কয়েক যুবক জোর করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। এসব ঘটনায় আমার মেয়ে বাড়িতে এসে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরদিন ২৮ জুন সকাল ৮টার দিকে আমার বসতঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করে।’

অভিযুক্ত ফয়সাল হোসেন (১৮) পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের উত্তর কাঁঠালতলী গ্রামের বাসিন্দা। জোবায়ের হোসেনের (২০) বাড়ি চরদুয়ানী ইউনিয়নের ছহেরাবাদ গ্রামে। ওই কসমেটিকসের দোকানের মালিক সাকিবুল ইসলামের (১৮) বাড়ি কাঁঠালতলী ইউনিয়নের তালুক চরদুয়ানী গ্রামে।

যোগাযোগের চেষ্টা করে অভিযুক্ত দুই যুবক ও দোকানমালিকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অভিযুক্ত জোবায়ের হোসেনের বাবা মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘এ রকম একটি ঘটনার কথা আমি শুনেছি। তবে যদি আমার ছেলে এ রকম কাজ করে থাকে, তাহলে আমিও চাই তার উপযুক্ত বিচার হোক।’

মারা যাওয়া ওই ছাত্রীর মা প্রথম আলোকে বলেন, আত্মহত্যার আগে তাঁর মেয়ে জানিয়েছে, ওই দোকানের তিন ঘণ্টা আটকে রেখে ফয়সাল ও জোবায়ের ধর্ষণ করেছেন। ধর্ষণ শেষে কয়েক যুবক বিভিন্ন উল্টাপাল্টা কথা বলে ভিডিও ধারণ করেছেন। তবে লজ্জা ও ভয়ের কারণে এ কথা কাউকে জানাননি। এখন লজ্জা-শরমের কারণে যখন তাঁর মেয়ে আত্মহত্যাই করেছে, তখন আর কাউকে ভয় পান না। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।

আজ রাসেল স্কয়ারে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চরদুয়ানী বাজারের একটি দোকানে প্রকাশ্যে তিন ঘণ্টা এক স্কুলছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণ ও ধর্ষণ শেষে হেনস্তা করে ভিডিও ধারণের ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানায়। পরিবারটি গরিব ও অসহায়ের কারণে থানায় তাঁদের মামলাটিও অপমৃত্যু মামলা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। বক্তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল মামুন বলেন, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তবে এর আগে কী ঘটেছিল, তা কেউ পুলিশকে জানাননি। পরে ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। এখন ওই ছাত্রীর পরিবার ধর্ষণের অভিযোগ করছে। তবে ধর্ষণের বিষয়টি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে বলা যাবে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।