দিনাজপুরে ৫-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না, গরমে ভোগান্তি
দিনাজপুরে তিন দিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। দিনের তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ৩৩ দশমিক ৫ থেকে ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা বিরাজ করছে ৭০ থেকে ৮৮ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে চলছে অব্যাহত লোডশেডিং। এতে মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। দিনে ও রাতে ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ-আট ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। একবার বিদ্যুৎ গেলে সর্বনিম্ন ৪৫ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছেন বাসিন্দারা।
আজ বুধবার দিনাজপুর সদর ও পার্বতীপুর উপজেলার কয়েকটি এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের এলাকায় সম্প্রতি লোডশেডিং বেড়েছে।
বেলা ১১টায় শহরের গণেশতলা এলাকায় টিভি মেকানিক ওয়াসি রহমান বলেন, শহরের মাতাসাগর এলাকায় বাড়ি তাঁর। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টায় বাড়ি ফিরেছেন। সাড়ে ১২টায় বিদ্যুৎ চলে গিয়ে ১টা ৪০ মিনিটে আসে। আবার ভোর পাঁচটায় বিদ্যুৎ যায়, আসে ছয়টায়। সাড়ে ছয়টায় আবার গেছে, এসেছে সাতটায়। সকাল ৮টায় বিদ্যুৎ গেছে, ৯টা ৪০ মিনিটে এসেছে। এরপর দোকানে আসেন। বেলা ১১টায় বিদ্যুৎ গেছে, এসেছে দুপুর ১২টায়। বেলা একটায় গেছে, দেড়টায় আসছে। বেলা সোয়া তিনটায় গেছে, এসেছে চারটায়। ওয়াসি রহমান বলেন, ‘একে তো গরমে অস্থির হয়ে যাচ্ছি, তার ওপর বিদ্যুতের এমন অবস্থায় ঠিকমতো কাজকামও করতে পারছি না।’
শহরের মুন্সিপাড়া এলাকায় ছেলেকে কোচিং সেন্টারে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন বসন্ত রানী। শহরের ছোট গুড়গোলা এলাকায় বাড়ি তাঁদের। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা ছিল। বিদ্যুৎও ঠিকমতো পাচ্ছিলাম; কিন্তু গত কয়েক দিনে গরমে অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। গরমে বাচ্চা ঠিকমতো খেতে চায় না, রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় ঘুমাতেও কষ্ট। দুই দিন মেঝেতে ঘুমিয়ে ছেলের ঠান্ডাজনিত সমস্যা শুরু হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরে গরম বাড়ছে। বর্তমানে তাঁদের বিদ্যুতের চাহিদা ২০ মেগাওয়াট। তবে গত কয়েক দিন সরবরাহ পাওয়া গেছে ১২-১৫ মেগাওয়াট। যতটুকু বিদ্যুৎ–ঘাটতি থাকছে, এলাকাভেদে বিভিন্ন সময় লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
শহরের চেয়ে গ্রামে তুলনামূলক লোডশেডিং বেশি। পার্বতীপুর যশাইহাট এলাকার বাসিন্দা ব্রততী বিশ্বাস বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৮-৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। একবার গেলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। ঘামে অস্থির হয়ে যাচ্ছি।’
গ্রামে বেশি লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর একজন ব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফেরদৌস আলম বলেন, ‘আমাদের চাহিদা যতটুকু, তার চেয়ে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, কয়েক দিন গরমটা বেশি পড়েছে। প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা বেশি থাকে। তবে এ সংকট দ্রুতই কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আজ দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন আছে। দিনাজপুরের আশপাশের এলাকাগুলোয় এরই মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে গরম কিছুটা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।