রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটির সঙ্গে গ্রীষ্মের ছুটি সমন্বয়
চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে পানিসংকটের শঙ্কা ও শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে পূর্বনির্ধারিত গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গ্রীষ্মকালীন ছুটি পিছিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির সঙ্গে সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সম্মেলনকক্ষে উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুপুরে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। বিষয়টি জানাজানির পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
ছুটি পুনর্বিন্যাসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ৫ থেকে ৯ মে ও ১৬ থেকে ২৪ জুন ঈদুল আজহার ছুটি পূর্বনির্ধারিত ছিল। কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের কারণে পানিসংকটের শঙ্কা ও শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ছুটিগুলো পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। পুনর্বিন্যস্ত ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা ৯ থেকে ২৭ জুন এবং অফিস ৯ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ৩০ জুন থেকে যথারীতি আবার ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ২১ এপ্রিল জরুরি সভায় ২ মে ক্লাস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিভাগগুলো প্রয়োজন মনে করলে ৬ জুন পর্যন্ত অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিভিন্ন গ্রুপ ও নিজেদের ফেসবুক টাইমলাইনে পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের ফেসবুক গ্রুপে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আফরোদিতি জামান লিখেছেন, ‘রাজশাহীতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করল প্রশাসন...!’ মোহাম্মদ রাওফিল নামের একজন লিখেছেন, ‘এটা কী আদৌ ভালো সিদ্ধান্ত হলো? গ্রীষ্মকাল শেষ হওয়ার পর গ্রীষ্মের ছুটি!’
তবে অনেকেই পক্ষে মত দিয়েছেন। সাকলাইন মোস্তাক নামের একজন লিখেছেন, ‘যথার্থ ও সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত।’ মোস্তাফিজুর রহমান ওই সিদ্ধান্তের পক্ষে সমর্থন দিয়ে লিখেছেন, ‘ভালো সিদ্ধান্ত। তবে ক্লাসগুলো অনলাইনে হলে ভালো হতো।’
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান গ্রীষ্মের ছুটি সমন্বয় করার কথা তুলে ধরে ওই গ্রুপে একটি পোস্ট করেছিলেন। তিনি একসঙ্গে সব ছুটি দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে লেখেন, ‘...ভেঙে ভেঙে ছুটি দেওয়ায় ক্লাস-পরীক্ষার নিয়মিত ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে এবং বারবার বাড়িতে আসা-যাওয়া করায় বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।’ এ জন্য তিনি গ্রীষ্ম ও ঈদের ছুটি সমন্বয়ের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মতামত চেয়েছিলেন। ওই পোস্টের এক দিন পর আজ প্রশাসন ছুটি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই কাঠফাটা রোদে, প্রচণ্ড দাবদাহে, হাঁসফাঁস গরমে আর বিদ্যুতের বাঁদরামির মধ্যে পূর্বনির্ধারিত গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করে ঈদের ছুটি বাড়ানো হলো। বাহ্! ভাবতেই কি ভালো লাগছে! ঈদের লম্বা ছুটির আনন্দে বাতাসে শরীর শীতল হয়ে আসছে! রৌদ্রস্নান করে শরীর একটু ঠান্ডা করে নিতে মন চাইছে!’