শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে কাজ করবেন ক্ষত বয়ে বেড়ানো মুকুল

সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ঘোষণার পর প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় সদস্যরাছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে কাজ করবেন ছাত্রলীগের নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়ানো ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদ। মানবাধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার—টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ’-এর ছাত্রসংগঠন সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি হিসেবে তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন। শনিবার দুপুরে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কমিটিতে আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমন আলীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এ ছাড়া সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলা বিভাগের ইউসূফ আলী, ইংরেজি বিভাগের ফোরকান আলী, আইন বিভাগের মোহাম্মাদ ইসমাইল। দুপুরে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়।

আরও পড়ুন

গত বছরের ১২ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের একটি কক্ষে নিয়ে ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুকুলকে রাতভর নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন। পিটিয়ে তাঁর বাঁ হাত ভেঙে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে সহপাঠীরা তাঁকে উদ্ধার করে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখান থেকে তাঁকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে হামলার দায় এড়াতে তাঁকে ‘শিবির নেতা’ আখ্যা দিয়ে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে ছাত্রলীগ। পুরো ঘটনাকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে উল্টো মুকুলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি তোলা হয়। মুকুল এখনো ওই নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন।

সোচ্চারের নির্বাহী পরিচালক যুক্তরাষ্ট্রের ফিল্যান্ডার স্মিথ ইউনিভার্সিটির রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুল হাসান। তাঁর সঞ্চালনায় আজ জুমে যুক্ত হয়ে সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরেন সোচ্চার বাংলাদেশের সভাপতি ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার অর্থনীতি বিভাগের পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো শিব্বির আহমদ। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে নির্যাতিতদের না বলা গল্পগুলো নীরবতা ভেঙে তাঁরা সামনে নিয়ে আসতে চান।

অনুষ্ঠানে সোচ্চারের একটি গবেষণা ফলাফল তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, অতীতে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যকার সংঘর্ষ আর গত ১৫ বছরের ছাত্র নির্যাতনের ঘটনাগুলোর মধ্যে চরিত্রগত দিক থেকে বিস্তর পার্থক্য আছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতনের শিকার ৫০ জন ছাত্রের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি।

ফলাফলে দেখা যায়, প্রায় ৮৪ শতাংশ নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে। নির্যাতনের শিকার এসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থী, হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রশাসন থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো সহায়তা পাননি।

আরও পড়ুন

সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর মুকুল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিজে ক্যাম্পাসে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমি জানি একজন শিক্ষার্থী যখন নির্যাতনের শিকার হয়, তখন কতটা অসহায়বোধ করে। আমার নির্যাতনের সময় কেউ কথা বলার সাহস পায়নি। তখন ঝুঁকি নিয়ে ‘সোচ্চার’ ও প্রথম আলো আমার পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছিল, সেটা অভাবনীয়। এ জন্য আমি আজ সাহস নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি।’