ময়মনসিংহে প্রেমে বাধা দেওয়ায় স্বামীকে হত্যা, স্ত্রী-প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড

ময়মনসিংহ আদালত থেকে আসামিদের কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। আজ রোববার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহে পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনায় স্ত্রী ও প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ডের দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক আলী মনসুর আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ময়মনসিংহ আদালত পরিদর্শক মোস্তাছিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন হালুয়াঘাট উপজেলার গোরকপুর গ্রামের আমান উল্লাহর ছেলে মো. লিয়াকত আলী (৩৬) ও একই গ্রামের কাজিম উদ্দিনের মেয়ে মোছা. সাবিনা খাতুন (৩৩)।

২০২১ সালের ২৯ আগস্ট সাবিনা খাতুনের স্বামী হযরত আলীকে (৩২) হত্যা করে লাশ বিলে পুঁতে রাখা হয়। হযরত আলী শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পূর্ব বাঁশকান্দা গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। এ ঘটনার পর পুলিশ লিয়াকত আলী ও সাবিনাকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবিনা খাতুনের ভগ্নিপতি ছিলেন লিয়াকত আলী। ঢাকায় ভগ্নিপতির বাসায় থাকতেন সাবিনা। সেখানে ভগ্নিপতির সঙ্গে তাঁর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি সাবিনার বোন টের পাওয়ায় তাঁকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। হত্যাকাণ্ডের অন্তত ১০ মাস আগে সাবিনা খাতুনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল হযরত আলীর। করোনার সময়ে ২০২১ সালে ভগ্নিপতি লিয়াকত আলীও বাড়িতে চলে আসেন। এরপর দুজনের সম্পর্ক চলমান থাকলে একদিন আপত্তিকর অবস্থায় দুজনকে দেখে ফেলেন হযরত আলী। প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে হযরত আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট রাত ৮টার দিকে সাবিনা খাতুন মুঠোফোনে হযরত আলীকে আসামি মো. লিয়াকত আলীর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ওই দিন রাতে হযরত আলী গোরকপুর বাজারে লিয়াকতের সঙ্গে দেখা করলে কৌশলে একই উপজেলার কুতিকুড়া আঁতলা বিলে নিয়ে তিনি গলায় গামছা পেঁচিয়ে হযরত আলীকে হত্যা করেন। হত্যার পর তিনি তাঁর মরদেহ মাটিতে পুঁতে রাখেন এবং বিষয়টি মুঠোফোনে সাবিনাকে জানান। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করা হলে পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। দুই আসামিও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন পিপি মো. আনোয়ার আজিজ টুটুল ও আসামিপক্ষে ছিলেন আবদুল কাদির খান।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, রায় ঘোষণার সময় দুই আসামি বিমর্ষ ছিলেন। আপিল করবেন কি না, বিচারক এমন প্রশ্ন করলে তাঁরা আপিল করবেন বলে জানান। পরে সাত কার্যদিবসের মধ্যে আপিল করার সময় বেঁধে দেন বিচারক।