সভায় আমন্ত্রণ না করায় ইউএনওর কাছে কৈফিয়ত চাইলেন বিএনপির নেতারা, অডিও ভাইরাল
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত একটি স্মরণসভায় বিএনপির স্থানীয় নেতাদের আমন্ত্রণ না করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে কৈফিয়ত চাইতে গিয়েছিলেন কয়েকজন নেতা। তখন ইউএনও ও বিএনপির নেতাদের কথোপকথনের একটি অডিও গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
অডিওতে সভায় আমন্ত্রণ করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের কথোপকথন করতে শোনা যায়। অডিওটি প্রথম আলোর পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে ইউএনও আবদুল কাইয়ূম ও বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতা ইউএনওর কার্যালয়ে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত সোমবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে ইউএনওর সভাকক্ষে একটি সভার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। সভায় শহীদ পরিবারের স্বজন, শিক্ষার্থী, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। এতে বিএনপির নেতাদের আমন্ত্রণ না করায় দলটির স্থানীয় নেতারা ক্ষুব্ধ হন।
দলীয় সূত্র জানায়, ওই ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন দলটির নেতা-কর্মীরা। কিন্তু জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে সেটি বন্ধ হয়। পরে সোমবার সন্ধ্যায় মঠবাড়িয়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কে এম হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা ইউএনওর কার্যালয়ে যান। তাঁরা ইউএনও আবদুল কাইয়ূমের কাছে উপজেলা প্রশাসনের সভায় তাঁদের নিমন্ত্রণ না করা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সভায় উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওই সময়ের কথোপকথনের ৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ছড়িয়ে পড়া অডিওতে ইউএনওর উদ্দেশে বিএনপির নেতা হুমায়ুন কবিরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কি বয়স কম, আমার বয়স ৫৪ চলে। আমি স্টুডেন্ট পলিটিকস করছি ৯৬ সাল থেকে…। আমি একটা কাগজ পাঠাইছি, সে (অফিস সহায়ক) আমার লোকরে আইন দেখায়। এরা আওয়ামী লীগ করে। আওয়ামী লীগ আমাদের হেডেক না, প্রশাসনের হেডেক ও গভর্নমেন্টের হেডেক। গভর্নমেন্টের টার্গেট চাইর বছর থাকবে। আওয়ামী লীগ থাকলে তো হ্যারা থাকতে পারবে না।’
এ সময় পাশ থেকে বিএনপির আরেক নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘গত কয়েক বছরে এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে প্রশাসন সাজিয়েছে, তাতে কেয়ারটেকার সরকার হিমশিম খাইতেছে।’ হুমায়ুন কবির আবার ইউএনওর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি জানেন না, আমি যেবার ইলেকশনে দাঁড়াইছি, পৌরসভায় ভোটে আমি হইয়া গেছি। যারা ভোট দেতে পারবে না, হ্যারাও আমারে ভোট দেতে আইছে কিন্তু কোনো লাভ নাই...। আগামী নির্বাচনে অগো (আওয়ামী লীগ) ভোট লাগবে না। আমাগো যে ভোট আছে, হেইয়াই তো লাগবে না। মাইনষে অগো ভোট দেবে নাহি। দেবে আমাগো, নাইলে জামাতরে। জামাত যদি অইয়া যাইতে পারে, আমাগো আপত্তি নাই।’
এ সময় আরেকজন ইউএনওর উদ্দেশে বলেন, ‘আমাগো বিএনপিতে কিন্তু কোনো পার্ট (গ্রুপিং) নাই, ভাগাভাগি নাই। সময়কালে আমরা সবাই এক। পার্ট অইয়া আমরা যতই বদমাইশি করি, হেইডা ভিন্ন জিনিস।’ তাঁর কথা শেষ না হতেই আরেকজন বলেন, ‘এখন কথা অইলো জাতীয় যত প্রোগ্রাম হইবে, সেইখানে আমাদের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে এনশিওর (নিশ্চিত) করবেন, সেটা আপনাকে করতে হবে। না করলে…আমরা কিন্তু আপনাকে বিব্রত করতে আসি নাই। আমরা আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে আসছি। আমরা নিজেরাই বিব্রত।’
ইউএনও আবদুল কাইয়ূমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো এখানে কাউকে ডেকে আনিনি। এখন এখানে যদি কেউ আসে, আমি কি বলব আপনি যান।’ ইউএনওর কথার প্রত্যুত্তরে বিএনপি নেতাদের একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি বলবেন, এইভাবে বলবেন, আপনার এখানে কী কাজ বলেন।’
এ ব্যাপারে কে এম হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার শহীদ পরিবারদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকে ইউএনও আমন্ত্রণ জানাননি। তিনি ৫ আগস্টের পর যাঁরা বিপ্লবের বিরোধিতা করছেন, তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন। এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মিছিল করতে চেয়েছিলেন। তিনি করতে দেননি। পরে সন্ধ্যায় উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতারা ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতে তাঁর কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। এর বেশ কিছু নয়।
ইউএনও আবদুল কাইয়ূম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবদার নিয়ে আসছেন। সোমবার ছাত্রদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে তাঁদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি, এ জন্য সন্ধ্যার পর তাঁরা তাঁর কার্যালয়ে এসেছিলেন। তিনি তাঁদের বলেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করার নির্দেশনা ছিল না, তাই করা হয়নি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁরা এ ধরনের সমস্যায় পড়ছেন বলে তিনি জানান।