কুমিল্লায় সমন্বয়কের মামলায় আওয়ামী লীগের মৃত ৩ নেতা আসামি

মো. কামাল উদ্দিন মজুমদার, ওয়াহিদুর রহমান ও আবদুল মমিন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হামলার অভিযোগে গত বুধবার রাতে মো. এমরান হোসেন নামের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমন্বয়ক মামলা করেছেন। মামলায় তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক দুই চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাসহ ৯৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করেছেন। নাম উল্লেখ করা আসামিদের মধ্যে তিনজন মৃত বলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

মামলায় ২৭, ৩৩ ও ৫৫ নম্বর আসামি হিসেবে যে তিনজন আওয়ামী লীগ নেতার নাম দেওয়া হয়েছে, তাঁরা মৃত। এই তিন নেতা হলেন ২৭ নম্বর আসামি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন মজুমদার, ৩৩ নম্বর আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আবদুল মমিন এবং ৫৫ নম্বর আসামি উপজেলার পূর্ব জোড়কানন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ওরফে ফরিদ। মৃত ব্যক্তিদের আসামি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।

মামলার বাদী মো. এমরান হোসেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ভোলা সদর থানার শাহামাদার গ্রামের শাহাজানের ছেলে।

মামলায় বলা হয়েছে, গত ৪ আগস্ট আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে উপজেলার বেলতলীর মনিপুর ও চাঙ্গিনি দক্ষিণ মোড়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান।

তিন নেতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মো. কামাল উদ্দিন মজুমদার সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাওড়াতলী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ২০২৩ সালের ১১ জুলাই মারা গেছেন। চলতি বছরের ২৪ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার শিকারপুর এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান আবদুল মমিন। আর ওয়াহিদুর রহমান গত বছরের সেপ্টেম্বরে কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মমিনের ছেলে আবু সাঈদ বলেন, ‘আমার বাবা কবর থেকে হামলা করেছেন, জেনে অবাক হয়েছি। তিনি তো জুনেই মারা গেছেন। তিনি কী করে ৪ আগস্টের হামলার ঘটনায় মামলার আসামি হতে পারেন, আমাদের বুঝে আসে না। তাঁরা যাচাই-বাছাই না করে এভাবে মামলা করলে মানুষ অযথা হয়রানির শিকার হবে। মনে হচ্ছে, এটা গায়েবি মামলা।’

আরেক প্রয়াত নেতা ওয়াহিদুর রহমানের ছেলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘মারা যাওয়ার এক বছর পরে বাবা কীভাবে হামলা চালিয়েছেন? একজন মৃত মানুষও কি শান্তিতে থাকতে পারবে না?’

গতকাল শুক্রবার রাতে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার বাদী মো. এমরান হোসেন বলেন, ‘মামলার অভিযোগ ও অভিযুক্তদের নামে কোনো সমস্যা নেই। তবে আসামি শনাক্তে কোনো ভুল হয়েছে কি না, সেটি আমরা দেখছি। যদি কোনো মৃত মানুষের নাম ভুলে চলে আসে, তাহলে পুলিশের তদন্তে তাঁকে বাদ দেওয়া হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক আবু রায়হান বলেন, ‘এমরান আমাকে জিজ্ঞেস করে মামলা করতে গেছেন। তবে কাকে আসামি করবেন, এ নিয়ে কোনো যোগাযোগ বা সমন্বয় করেননি। অযথা কোনো মানুষকে হয়রানি করা অবশ্যই দুঃখজনক। মৃত মানুষকে আসামি করার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মামলাটির সঠিক তদন্ত চাই।’

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেন অভিযোগ করেন, শুধু তিন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতাই নন, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত কয়েকজনকেও এই মামলার আসামি করা হয়েছে। তিনি সঠিক তদন্ত দাবি করেন।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তেই সব বের হয়ে আসবে। এতে মৃত কোনো ব্যক্তি আসামি হলে তাঁদের নাম বাদ যাবে।

এই মামলার প্রধান আসামি সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। মামলার ৪ নম্বর আসামি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু। তিনি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।