প্রতিমা দেখতে এসে বই উপহার পেয়ে আনন্দিত শিশু-কিশোরেরা
শ্যামল কুমার (৭), শশি দাস (৯) ও বিমল বিশ্বাসের (১৬) মতো শিশু-কিশোরেরা এসেছিল দেবী দুর্গার প্রতিমা দর্শনে। অন্য বছরের মতো এবারও বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে, এটা ওটা খেয়ে সময়টা কাটছিল। হঠাৎ একটা পূজামণ্ডপ চত্বরে তাদের দেখা হয়ে যায় একদল যুবকের সঙ্গে। তাঁরা বিনা মূল্যে ওই শিশু–কিশোরদের হাতে তুলে দেন নানা রকমের বই। একসঙ্গে সবাই বই উপহার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে।
গতকাল শুক্রবার রাতে এমন ঘটনা ঘটেছে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বড়াইগ্রাম সর্বজনীন পূজামণ্ডপে। বই বিতরণের কাজটি করেছে জেলা হিন্দু যুব-ছাত্র মহাজোট ও সনাতন জাগরণ মঞ্চ। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ পূজামণ্ডপে আসা শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়েছে।
সংগঠনটির অন্তত তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার তাঁরা পূজার আগে সভা করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে বিনা মূল্যে সারা জেলার অন্তত ১৪টি মণ্ডপ চত্বরে বই বিতরণের সিদ্ধান্ত নেন। সে মোতাবেক তাঁরা দলবদ্ধ হয়ে জেলার সাতটি উপজেলার অন্তত ১৪টি পূজামণ্ডপ চত্বরে যান। সেখানে আগত দর্শনার্থী শিশু কিশোরদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং প্রত্যেকের হাতে একটি করে বই তুলে দেন। বই উপহার পেয়ে তারাও ভীষণ খুশি হয়। এ কাজের জন্য সংগঠনটি অনেক প্রশংসা পেয়েছে।
বড়াইগ্রাম সর্বজনীন পূজামণ্ডপে আগত দর্শনার্থী কিশোর বিমল বিশ্বাস জানায়, তারা দল বেঁধে প্রতিমা দর্শনে বেরিয়েছিল। অন্যবারের মতোই ঘুরছিল, এটা ওটা খাচ্ছিল। হঠাৎ একদল যুবক এসে তাদের হাতে বই ধরিয়ে দেন এবং কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেন। এই ঘটনাটি তাদের কাছে এবারের পূজা অন্যবারের চেয়ে একটু হলেও আলাদা মনে হয়েছে। ভালো লেগেছে বই উপহার পেয়ে।
সিংড়ার কলম গ্রামের পলাশ দাস বলে, ‘কয়েকজন হঠাৎ পূজার মেলায় এসে আমাদেরকে বই উপহার দিয়েছেন। আমরা মেলায় বসেই অর্ধেক বই পড়ে ফেলেছি। খুব ভাল লাগছে।’ পলাশের মা চিত্রা রাণি জানালেন, এর আগে কখনো মেলায় এসে কাউকে বিনা মূল্যে বই উপহার দিতে দেখেননি তিনি। হিন্দু যুব-ছাত্র মহাজোট ও সনাতন জাগরণ মঞ্চের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এটা অব্যাহত রাখা দরকার।
নাটোর জেলা হিন্দু যুব-ছাত্র মহাজোট ও সনাতন জাগরণ মঞ্চের সভাপতি সুজিত ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জেলার সাতটি উপজেলার অন্তত ১৪টি পূজা মণ্ডপে গিয়ে প্রতিমা দর্শনার্থী শিশু-কিশোরদের মধ্যে বই বিতরণ করেছি। এতে সবার মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করেছি। আমরা এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চাই।’
এই কর্মসূচির সঙ্গে হিন্দু মহা জোটের সাবেক আহ্বায়ক ভাস্কর বাগচী, সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার নাগ, নির্বাহী সদস্য পলাশ দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিঠু বণিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক সোমনাথ নাগ প্রমুখ যুক্ত আছেন। তাঁদের সহযোগিতায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছে।