নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় হাঁসবোঝাই পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৪৬ নেতা–কর্মীর নামে মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও প্রায় ৪০ জনকে। গতকাল রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে কেন্দুয়া থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে মামলাটি করা হয়।
মামলায় জেলা বিএনপির সদস্য ও কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করা হয়। ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. রফিকুল ইসলাম হিলালীকে। মামলায় ১৪৬ জনের নাম উল্লেখসহ মোট আসামি করা হয় ১৮৬ জনকে। এ নিয়ে গত তিন সপ্তাহে জেলার বারহাট্টা, কেন্দুয়া, আটপাড়া, পূর্বধলা ও নেত্রকোনা মডেল থানায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত আটটি মামলা করা হলো। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ১ হাজার ১৮১ জন। তাঁদের মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে অন্তত ৫১১ নেতা-কর্মীর। একটি ছাড়া অন্য মামলাগুলোর বাদী পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দুয়া-তাড়াইল সড়কের কাশিপুর এলাকায় বাট্টা কাচারি মোড়ে কয়েকজন দুর্বৃত্ত রাস্তা বন্ধ করে হাঁসবোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান থামায়। পরে চালককে মারধর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে সামনের অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে পিকআপ ভ্যানটির সামনের কেবিনের কিছু অংশ পুড়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন এসে পিকআপ ভ্যানে থাকা হাঁসগুলো উদ্ধার করে পানি ঢেলে আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
এ ঘটনায় গতকাল রাতে কেন্দুয়া থানার উপপরিদর্শক তাপস বণিক বাদী হয়ে নাশকতা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। মামলায় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী, সদস্য দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, উপজেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
দেলোয়ার হোসনে ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছি। তবে পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়া বা কোনো ধরনের নাশকতার সঙ্গে আমিসহ নেতা-কর্মীরা কেউ জড়িত নন। সরকার মনে করছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে পতন ঠেকাবে। তবে এভাবে সরকার আর ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। অচিরেই পতন ঘটবে।’
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কোনো রকম মিথ্যা বা অলীক ঘটনা সাজিয়ে মামলা করা হয়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী মুঠোফোনে বলেন, ‘এই সরকারের আমলে এ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে ৫৬টি মিথ্যা গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নেত্রকোনায় ৩৫টি মামলা ও ঢাকায় ১৪টি মামলা চলামান রয়েছে। আর ৭টি মামলায় আদালত খালাস দিয়েছেন। এক সপ্তাহ আগে আওয়ামী লীগের শত শত নেতা-কর্মী থানাসংলগ্ন আমার বাসা ও বিএনপির কয়েকজনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন। এ সময় পুলিশও উপস্থিত ছিল। কিন্তু পুলিশ এর ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমাকেসহ ২০৬ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা, কাল্পনিক, অলীক ঘটনা সাজিয়ে গায়েবি মামলা দিয়েছে। আমরা এখন গণতন্ত্রহীন অন্ধকার যুগে বাস করছি।’