নড়াইলের দুই আসনে নির্ভার মাশরাফি ও কবিরুল
নড়াইলের দুটি আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের শক্তিশালী কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাঁরা কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য প্রচার চালাচ্ছেন।
নড়াইল-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এই কারণে তাদের তেমন প্রচার-প্রচারণা নেই। মূলত ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিত বাড়াতে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিরতিহীন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন মাশরাফি। একই অবস্থা নড়াইল-১ আসনের। সেখানে নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম কবিরুল হক ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে প্রচার চালাচ্ছেন।
নির্বাচনে মাশরাফির প্রতিদ্বন্দ্বী ছয়জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সৈয়দ ফয়জুল আমির ও মো. নূর ইসলাম। এ ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমান, জাতীয় পার্টির খন্দকার ফায়েকুজ্জামান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাহবুবুর রহমান, এনপিপির মো. মনিরুল ইসলাম ও গণফ্রন্টের মো. লতিফুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ফয়জুল আমির লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি উচ্চ আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। গত বুধবার তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। নড়াইল শহরে তাঁর বাসায় সাংবাদিকদের ডেকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী মাশরাফির সঙ্গে কোনো কথা হয়নি বা অন্য কারও চাপে নয়, মূলত আমার স্ত্রী ও ভাইবোন নির্বাচন করার পক্ষে নয়।’ সাংবদিকদের মাধ্যমে সবাইকে নৌকার পক্ষে থাকার আহ্বান জানান তিনি। স্থানীয় রাজনীতিকদের ভাষ্যমতে, মাশরাফির মতো জনপ্রিয় প্রার্থীর বিপক্ষে মাঠ জমাতে না পেরে বুঝেশুনেই নির্বাচনের আগমুহূর্তে ফয়জুল আমির সরে দাঁড়িয়েছেন।
নড়াইল পৌরসভা ও সদরের আটটি ইউনিয়ন এবং লোহাগড়া পৌরসভা ও এ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে নড়াইল-২ আসন। এ আসনের নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁদের ভাষ্যমতে, এ আসনে যেসব রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিয়েছে, সেসব দলের অবস্থান এখানে খুবই দুর্বল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও তেমন পরিচিত নন। অন্যদিকে এখানে আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ। এ ছাড়া মাশরাফির ইমেজের কাছে কেউ টিকছে না। মাশরাফি যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে জনতার ঢল নামছে, বিশেষ করে তরুণসমাজের মধ্যে মাশরাফিকে নিয়ে উৎসবের আমেজ।
লোহাগড়া পৌরসভার মেয়র ও লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মশিয়ূর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাশরাফি ক্লিন ইমেজের লোক। গত পাঁচ বছরে এলাকার উন্নয়নের জন্য তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। কারও প্রতি বৈরী আচরণ করেননি। সব মানুষের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছেন। বিপুল ভোটে তিনি বিজয়ী হবেন।’
জানা গেছে, গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাশরাফির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ৭ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়েছিলেন। মাশরাফি পেয়েছিলেন ২ লাখ ৭১ হাজার ২১০ ভোট।
নড়াইল-১ (সদরের একাংশ ও কালিয়া উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বি এম কবিরুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন চারজন। তাঁরা হলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মো. নজরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির মো. মিল্টন মোল্লা, তৃণমূল বিএনপির শ্যামল চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির (জেপি) শামিম আরা পারভীন।
কালিয়া উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানান, বি এম কবিরুল হক কালিয়া পৌরসভার মেয়র ছিলেন। এ আসনে তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। তৃণমূলে তাঁর শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর পক্ষে রয়েছেন। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী দল ও প্রার্থীর অবস্থান খুবই দুর্বল।