শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও দাবির মুখে পদত্যাগ করেছেন চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। আজ শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইফতেখার মনির বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
ইফতেখার মনির জানান, উপাচার্য অনুপম সেন, সহ-উপাচার্য কাজী শামীম সুলতানা ও কোষাধ্যক্ষ তৌফিক সাঈদ সন্ধ্যায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। উপাচার্য বার্ধক্যজনিত, সহ-উপাচার্য ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এবং কোষাধ্যক্ষ ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন।
এর আগে আজ বেলা সাড়ে তিনটায় পদত্যাগের দাবিতে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। নগরের জিইসি ক্যাম্পাসের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। বিক্ষোভ চলাকালে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা পদত্যাগের সময় বেঁধে দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, আজ রাত আটটার মধ্যে তিন শিক্ষক পদত্যাগ না করলে আগামীকাল শনিবার কঠোর কর্মসূচি পালিত হবে। এরপরই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন তিন শিক্ষক।
পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আসায় বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন শিক্ষার্থীরা। রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রান্ত বড়ুয়া বলেন, তাঁদের দাবি পূরণ হয়েছে। তাঁরা এখন শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন।
এর আগে গত বুধবার একই দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদ। সমাবেশ শেষে দুপুর ১২টার দিকে তিন শিক্ষকের পদত্যাগের জন্য এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনেরও দাবি জানান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিইসি মোড়, হাজারী গলি ও ওয়াসা মোড় ক্যাম্পাসের ফটকে তালা দেওয়া হয়। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবারও একই দাবিতে কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
উপাচার্যের বিবৃতি
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে আজ বিকেলে উপাচার্য অনুপম সেন গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান। সেখানে অসুস্থতার কারণে নিজেই অব্যাহতি চান বলে জানিয়েছেন অনুপম সেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ‘যেসব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আমার পদত্যাগ চেয়েছে, তাদের আমি জানাতে চাই, আমি সারা জীবন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। আমি কোনো দিন বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ মন্তব্য করেছি, এমনটি মনে পড়ে না। ছাত্রদের যেমন সমভাবে দেখেছি, তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও সম্মানজনকভাবে ব্যবহার করেছি।’
অনুপম সেন বলেন, ‘বাংলাদেশে কতিপয় ব্যক্তি গত কয়েক বছরে যেভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হচ্ছিল, তা আমাকে প্রচণ্ড ব্যথিত করেছিল, আঘাত করেছিল। এ জন্যই আমি আওয়ামী লীগের গত দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে যাইনি। আমি সিআরবি রক্ষার জন্য যে আন্দোলন করেছিলাম, সেই আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণভাবে সরকারের অভিপ্রায়বিরোধী।’
সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি আমার বেতন ও ভাতার বাইরে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির তহবিল থেকে এক পয়সা অর্থ অনৈতিকভাবে গ্রহণ করিনি। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কোনো দুর্নীতি, অন্যায় ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করিনি। জীবনে কোনো দিন জ্ঞাতসারে কারও ওপর কর্তৃত্ব করিনি, সবার উপকার করার চেষ্টা করেছি। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি বা না থাকি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল কামনা করব আমার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত।’