শিক্ষকের কাছ থেকে উপহার পাওয়া গাড়িটি অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহারের ঘোষণা হিরো আলমের
বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে একটি গাড়ি উপহার দিয়েছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামের শিক্ষক এম মখলিছুর রহমান। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে হিরো আলম হবিগঞ্জে এসে তাঁর উপহারের গাড়িটি গ্রহণ করেছেন। তবে উপহার গ্রহণের পর তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, গাড়িটি তিনি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করবেন না; বরং অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে সাধারণ মানুষ ব্যবহার করবেন এটি।
হিরো আলমকে গাড়ি উপহার দেওয়া এম মখলিছুর রহমান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামের হাজি আবদুল জব্বার জিএল একাডেমি অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। উপনির্বাচনের এক দিন আগে ৩১ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে তিনি হিরো আলমকে নিজের ব্যবহৃত নোহা মাইক্রোবাসটি উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন।
হিরো আলম উপহারের গাড়ি নিতে হবিগঞ্জে আসছেন, এই খবরে আজ সকাল থেকে চুনারুঘাটের নরপতি গ্রামে মানুষের ঢল নামে। চুনারুঘাট উপজেলা ছাড়াও হবিগঞ্জ সদর, বাহুবল, মাধবপুর উপজেলা থেকেও উৎসুক মানুষ হিরো আলমকে একনজর দেখতে আসেন। হিরো আলমকে উপহার হস্তান্তর উপলক্ষে শিক্ষক মখলিছুর রহমানের বাড়ির সামনে বানানো হয় একটি মঞ্চ। বেলা তিনটায় হিরো আলম নরপতি গ্রামে এসে পৌঁছান। হিরো আলমকে বহনকারী গাড়িটি গ্রামের ভেতরে ঢুকতেই কয়েক শ মানুষ গাড়িটি ঘিরে ধরেন।
হিরো আলম মঞ্চে উঠেই সেখানে অবস্থান করা অতিরিক্ত লোকজনকে মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। হিরো আলম বলেন, ‘মঞ্চে অতিরিক্ত লোকজন থাকলে কী অবস্থা দাঁড়ায়, তা আপনারা কিছুদিন আগে দেখেছেন। কাজেই আপনাদের কাছে অনুরোধ, সবার মঞ্চে থাকার প্রয়োজন নেই।’
মখলিছুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হিরো আলম বলেন, ‘সিলেটের মানুষ কথা দিয়ে কথা রেখেছেন। অনেকের ধন আছে, কিন্তু বিতরণ করার মতো তাঁদের মন নেই। আবার অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা মানুষের কল্যাণে সব বিলিয়ে দেন। তেমনি হবিগঞ্জের মখলিছুর রহমান একজন।’
গাড়িটি অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহারের ঘোষণা দিয়ে হিরো আলম বলেন, ‘আমি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এ উপহারের ঘোষণায় মন দিতে পারেনি। পরে মখলিছুর রহমান আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও আমি তা বিশ্বাস করতে পারিনি, তিনি সত্যিই এ গাড়ি উপহার দেবেন। ফেসবুকে দেখেছি, অনেকেই তাঁর এই ঘোষণায় তাঁকে (মখলিছুরকে) গালিগালাজ করছেন। যে কারণে আমি তা (গাড়ি) নিতে চাইনি। পরে দেখলাম, আমার দেশ-বিদেশের অনেক বন্ধু ফোন করে অনুরোধ করেন, কেউ কিছু উপহার দিলে তা গ্রহণ করতে হয়। তাঁদের অনুরোধে আজ হবিগঞ্জে আসা। মখলিছুর রহমান যে গাড়ি আমাকে উপহার দিয়েছেন, তা আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করব না। ভালোবাসার দান ভালোবাসার মধ্যে থাকবে, তা অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কারণ, এ দেশের অনেক মানুষ আছেন, চিকিৎসা গ্রহণ করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে পারেন না।’
হিরো আলমকে গাড়ি উপহার দিয়ে মখলিছুর রহমানও বেশ খুশি। তিনি বলেন, ‘হিরো আলমকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমি রক্ষা করেছি। তিনি হবিগঞ্জে আসায় হবিগঞ্জের মানুষ তাঁকে ভালোবাসা দিয়ে বরণ করেন। হিরো আলম দেশের হিরো। তিনি হবিগঞ্জে আসার আগে আমি তাঁকে খাওয়ার মেন্যু জানতে চাইলে তিনি (হিরো আলম) আমাকে জানান, দেশি মোরগের মাংস তাঁর পছন্দ। তাঁর পছন্দের খাবার দিয়েই আমার বাড়িতে আপ্যায়ন করেছি।’
হিরো আলম বগুড়া-৬ আসনে জামানত হারালেও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন। ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদের এ কে এম রেজাউল করিমের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি। এরপর হিরো আলম অভিযোগ করেন, ভোটের ফলাফলে কারচুপি করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপনির্বাচনের এক দিন আগে ৩১ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে শিক্ষক মখলিছুর রহমান ঘোষণা দেন, তিনি তাঁর নিজের ব্যবহৃত নোহা মাইক্রোবাসটি হিরো আলমকে উপহার দেবেন। ভিডিওতে মখলিছুর রহমান বলেন, ‘হিরো আলম একসময় জিরো ছিলেন। জিরো থেকে তিনি হিরো হয়েছেন। হিরো আলম এখন সোনার টুকরা। দুই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়ার মানুষ জানের চাইতে তাঁকে বেশি ভালোবাসেন। তিনি বগুড়ার মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। নির্বাচনে ফল যেটাই আসুক না কেন, সিলেট বিভাগের পক্ষ থেকে গাড়িটি তাঁকে উপহার দিতে চাই।’
প্রথম দিকে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি হিরো আলম। যোগাযোগও করেননি। কয়েক দিন পর আবার আক্ষেপ প্রকাশ করে ভিডিও দেন এম মখলিছুর রহমান নামের ওই শিক্ষক। এরপর যোগাযোগ করেন হিরো আলম। অবশেষে সেই গাড়ি নিতে হিরো আলম আজ হবিগঞ্জে আসেন।