ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ফরিদপুর বিএনপির বিভক্ত রূপ প্রকাশ্যে

ফরিদপুরে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সমর্থিত অংশ ‘জেলা ছাত্রদল ও মহানগর ছাত্রদল’-এর ব্যানারে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে। বুধবার বিকেলে শহরের ব্রাহ্মসমাজ সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরে জেলা ছাত্রদল আজ বুধবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সংগঠনের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করেছে। ফরিদপুরে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। জেলা বিএনপি বর্তমানে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এখানেও রয়েছে বিরোধ। আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব সমর্থিত দুটি অংশ বিভক্ত হয়ে দলীয় রাজনীতি করছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সমর্থিত অংশ আজ বিকেল চারটার দিকে শহরের গোরস্থানের মোড়ে ‘জেলা ছাত্রদল’-এর ব্যানারে এবং সদস্যসচিব সমর্থিত অংশ একই সময় শহরের ব্রাহ্মসমাজ সড়কে ‘জেলা ছাত্রদল ও মহানগর ছাত্রদল’-এর ব্যানারে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে।

কর্মসূচি একই হলেও আহ্বায়ক সমর্থিত অংশ আগে শোভাযাত্রা করে পরে সমাবেশ করে এবং সদস্যসচিব অংশ আগে সমাবেশ করে পরে শোভাযাত্রা করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আহ্বায়ক সমর্থিত অংশ ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করে। এটি মুজিব সড়ক ধরে জনতা ব্যাংকের মোড়, আলীপুরের মোড় হয়ে গোরস্থানের মোড় এলাকায় যায়। পরে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী। সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি রেজাউল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন, জুলফিকার হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন।

সদস্যসচিব সমর্থিত অংশের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আদনান হোসেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নায়াব ইউসুফ, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি মাহবুবল হাসান, মহানগর বিএনপির সভাপতি এ এফ এম কাইয়ুম ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফরিদপুর জেলা বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত হয়ে আছে। আহ্বায়ক অংশের নেতৃত্ব দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) শামা ওবায়েদ এবং সদস্যসচিব সমর্থিত অংশের নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম। শামা ওবায়েদ ও শহীদুল ইসলাম দুজনই ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বাসিন্দা। এর মধ্যে শামার বাড়ি লস্করদিয়া ইউনিয়নের লস্করদিয়া গ্রামে এবং শহীদুল ইসলাম তালমা ইউনিয়নের কোনা গ্রামের বাসিন্দা।

ফরিদপুরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সমর্থিত অংশ ‘জেলা ছাত্রদল’-এর ব্যানারে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে। বুধবার বিকেলে শহরের গোরস্থানের মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

নগরকান্দা ও সালথা নিয়ে ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসন গঠিত। আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি–দলীয় মনোনয়ন কে পাবেন—এ নিয়েই মূলত দ্বন্দ্ব রয়েছে। এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ২১ আগস্ট শহীদুল ইসলামের শোভাযাত্রায় শামাপন্থীদের হামলায় এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনার পর শামা ও শহীদুল দুজনেরই দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদসহ দলীয় সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করে রাখা হয় দীর্ঘদিনের জন্য।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাঁকে যে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তিনি সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এটি শহরের ব্রাহ্মসমাজ সড়কে হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের ব্যানারে অন্য কোথায় কী কর্মসূচি পালিত হয়েছে, তা তাঁর জানা নেই। তবে এ কে কিবরিয়া বলেন, তবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে অনুষ্ঠান করা ঠিক হয়নি।

কেন জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ফরিদপুরে দুই ভাগে পালন করা হলো জানতে চাইলে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন বলেন, ‘জেলা ছাত্রদল সভা করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর যে কর্মসূচি  নিয়েছিল, তা হলো বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা এবং পরে আলোচনা সভা। এই আলোচনা সভায় জেরা বিএনপির সূচনালগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা থেকে “হাওয়াই চাপ”-এর কারণে জেলা ছাত্রদল নেতাদের বাধ্য করা হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করতে। এ জন্য আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি সৈয়দ মোদাররেছ অলীকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছি।’