বরিশালের মেয়রের দায়িত্ব নিলেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় এ উপলক্ষে নগর ভবনের সামনে বরিশাল ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে এক নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে নবনির্বাচিত মেয়র ও ৪০ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া নগরের ৩০টি ওয়ার্ড থেকে দলীয় নেতা-কর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এতে যোগ দেন।
বেলা ১১টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়, চলে বেলা দেড়টা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী। মেয়র ছাড়াও বক্তব্য দেন বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম ও বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, সাবেক সচিব সিরাজউদ্দীন আহম্মেদ, বরিশাল নগর পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, আবুল খায়ের আবদুল্লাহর স্ত্রী লুনা আবদুল্লাহ, জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস প্রমুখ।
নাগরিক সমাবেশে মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, ‘৩০০ কোটি টাকার দায়দেনার বোঝা নিয়ে আজ দায়িত্ব নিচ্ছি। এটা নগরবাসীর দায়দেনা। তহবিলে আছে মাত্র ১২ কোটি টাকা এরপরও আমি হতাশ নই, এতে হতাশার কিছু নেই। আমাদের কাজ করতে হবে। নতুন বরিশাল গড়ার যে অঙ্গীকার আমি নির্বাচনের প্রাক্কালে করেছিলাম, আমি আজ আবারও তা পুনর্ব্যক্ত করছি। মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন, বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব, সেই অঙ্গীকার আবারও পুনর্ব্যক্ত করছি।’
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে নতুন মেয়র বলেন, ‘উন্নত, আধুনিক নগর গড়তে হলে আমার একার পক্ষে অসম্ভব। এ জন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা দরকার। আমি হিংসা, বিদ্বেষ কিংবা বৈষম্যমূলক আচরণে বিশ্বাস করি না। কিন্তু আপনাদের আমি অনুরোধ করে বলতে চাই, আপনারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন। নগরবাসী যাতে কষ্ট না পান, দুর্ভোগে না পড়েন, সেবা পেতে দীর্ঘসূত্রতার শিকার না হন, সেটা নিশ্চিত করতে আমি আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই, বরিশাল সিটি করপোরেশন হবে আজ থেকে একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান। দ্রুততার সঙ্গে সেবা পেতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, সেটা আমরা নিশ্চিত করব, কথা দিচ্ছি। আর সিনিয়র সিটিজেন যাঁরা রয়েছেন, সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। তাঁদের মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে।’
আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালবাসীকে নতুন উপহার দিয়েছেন। অবহেলিত এই নগরবাসীর উন্নয়নে আমি দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এই অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ নিব। পরিকল্পিতভাবে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। আর এতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, পয়োনিষ্কাশন, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট সংস্কার, সড়কের মোড়গুলো সম্প্রসারণ, সৌন্দর্যবর্ধনসহ জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ।’
অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক নতুন মেয়রকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আজকের এই দিনটির জন্য আমরা অধীর অপেক্ষায় ছিলাম। বরিশালবাসী চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং উন্নত, আধুনিক একটি নগর। নতুন মেয়র হিসেবে আপনার প্রতি আমার অনুরোধ, বরিশালের মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারেন, যাতে তাঁরা গর্ব করে বলতে পারেন, আমরা একজন ভালো মেয়র পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী চান অবহেলিত বরিশাল আপনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাক। এ জন্য আমাদের যে ধরনের সহযোগিতা দরকার, আমরা দিব।’
নতুন মেয়রের দায়িত্বগ্রহণ উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন সড়ক বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ। সড়কদ্বীপগুলোও সজ্জিত করা হয়েছে। গত রোববার থেকেই নগর ভবনসহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় করা হয়েছে আলোকসজ্জা। তিন দিন ধরে সন্ধ্যার পরে চলছে আতশবাজি।