হালদায় ডলফিনের পর এবার ভেসে উঠল মরা মা রুই মাছ

হালদা নদীতে এবার ১০ কেজি ওজনের একটি মা রুই মাছ মরে ভেসে উঠেছে। আজ বেলা দুইটার দিকে রাউজান উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের বাকর আলী চৌধুরী ঘাট এলাকায়ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে এবার ১০ কেজি ওজনের একটি মা রুই মাছ  মরে ভেসে উঠেছে। আজ বুধবার বেলা দুইটার দিকে রাউজান উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাকর আলী চৌধুরী ঘাট এলাকা দিয়ে ভেসে যাওয়ার সময় নদীর স্বেচ্ছাসেবকেরা এটি ডাঙায় তুলে আনেন।

বেলা তিনটার দিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও হালদার স্বেচ্ছাসেবীরা মিলে এটি মাটিচাপা দেন। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ৪টায় নদীর হাটহাজারী অংশে একটি বড় ডলফিন মরে ভেসে ওঠে।  

এর আগে গত এক সপ্তাহ আগে আরেকটি ১২ কেজি ওজনের মরা কাতলা নদীতে ভেসে এলে সেটি ডাঙায় তুলে মাটিচাপা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে উরকিরচর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুহাম্মদ কাউসার আলম।

প্রজনন মৌসুমে এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন নদীগবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, প্রজনন মৌসুমের শেষ হতে চললেও গত তিন মাসে পুরোদমে মা মাছেরাও এবার ডিম ছাড়েনি। এ মৌসুমে গত ৭ মে স্বল্প পরিমাণে ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। সংগ্রহকারীরা আশায় ছিলেন বজ্রবৃষ্টিতে পুরোদমে ডিম ছাড়বে; কিন্তু দেড় মাসেও আর তা ঘটেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা, হালদা নদীর স্বেচ্ছাসেবী ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বেলা দুইটার দিকে জোয়ারের সময় নদীর ওই এলাকায় লোকজন একটি মরা মা মাছ ভেসে যেতে দেখেন। পরে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী সেটি ডাঙায় তুলে আনেন। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্য কাউসার আলমকে খবর দেন। তিনি এসে উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তর ও হালদা রিচার্স অ্যান্ড ল্যাবরেটরিতে কথা বলে নদীর পাড়ে মা মাছটি মাটিচাপা দেন।

হালদার স্বেচ্ছাসেবী মুহাম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নদীতে আগে যান্ত্রিক নৌযানের পাখার আঘাতে ডলফিন ও মা মাছ মরে ভেসে উঠত। এখন ভেসে ওঠা মা মাছ ও ডলফিনে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের ধারণা, নদীর হাটহাজারী অংশে যে চারটি খাল হয়ে নগরের বিভিন্ন কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য হালদা নদীতে পড়ছে, এসবের বিষক্রিয়ায় মা মাছ ও ডলফিন মারা যেতে পারে।

উরকিরচর ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুহাম্মদ কাউসার আলম প্রথম আলোকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে একই জায়গায় আরেকটি ১২ কেজি ওজনের মরা মা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনা ঘটে। তিনি ঘাটের মাঝিদের বলে রেখেছেন, মা মাছ ভাসতে দেখলে তাঁকে যেন জানান। এরপর তিনি প্রশাসনকে অবগত করেন।

হালদা নদীগবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেলে জোয়ারের সময় একটি ৯০ কেজি ওজনের বড় ডলফিন পাওয়া যায় নদীর হাটহাজারী অংশে। আজ রাউজান অংশে পাওয়া গেল একটি মরা মা রুই মাছ। এক সপ্তাহ আগেও মা কাতলা মাছ নদীতে ভেসে ওঠার ঘটনা আছে। এসব নদীর জন্য মারাত্মক দুঃসংবাদ। নদীতে এখন অন্যান্য পরিবেশ ভালো আছে। বালু তোলার ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌ চলাচল বন্ধ আছে। তবে সমস্যা একটি রয়ে গেছে, সেটি হচ্ছে দূষণ। নদীর বিভিন্ন স্থানে দূষণ চলছে। বিশেষ করে হাটহাজারীর তিনটি অংশে খাল দিয়ে নগরের কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি হালদায় পড়ছে। এসব দূষণের কারণে ডলফিন ও মা মাছ মারা যেতে পারে বলে জানান তিনি।