‘প্রতিপক্ষের ফসলহানি করা কোনো রাজনীতি হতে পারে না’
চার বিঘা জমিতে কলার বাগান। বেশির ভাগ কলাগাছে দায়ের কোপ, কলার কাঁদি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে মাটিতে। কলাবাগানের পাশে পেঁপের বাগান রয়েছে। দুই বিঘা জমির পেঁপেগাছগুলো মাঝবরাবর কেটে ফেলা হয়েছে। অথচ প্রতিটি গাছে ফল এসেছিল। পেঁপেবাগান-লাগোয়া জমিতে আড়াই বিঘা বাঁধাকপির খেত। দুর্বৃত্তরা কপির খেতে এলোপাতাড়ি কোপ দিয়ে কপি নষ্ট করে।
এক রাতের মধ্যেই কৃষক গোলাম মোস্তফার কষ্টে গড়ে তোলা খেতের এ অবস্থা। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি রাজনীতির জায়গা। প্রতিপক্ষের ফসলহানি করা কোনো রাজনীতি হতে পারে না। এভাবে এক কৃষককে নিঃস্ব করে দেওয়ার চেষ্টা হলো। আর কয়েক সপ্তাহ পরেই ফল আর সবজি ঘরে তুলতে পারতাম। আমার ১১ থেকে ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন সার ও কীটনাশক দোকানের বকেয়া পরিশোধ করব কীভাবে?’
সদ্য সমাপ্ত ষষ্ঠ উপজেলার প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনী সহিংসতায় মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফার সাড়ে ৮ বিঘা জমির ফল ও ফসল বলি হয়েছে। ৮ মে সদর ও মুজিবনগর উপজেলায় নির্বাচন হয়। নির্বাচনের পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর মধ্যে ফসল বিনষ্টের ঘটনা ঘটে। এখন আবার উত্তেজনা বাড়ছে দুই পক্ষের।
মুজিবনগর উপজেলার মহজনপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমাম হোসেন জয় পান। পরাজিত হন ওই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। গোলাম মোস্তফা জয়ী প্রার্থী আমাম হোসেনের সমর্থক ছিলেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গত ২৬ এপ্রিল উপজেলা নির্বাচনী প্রচারণার সময় মহজনপুর বাজারে আমাম হোসেন ও রফিকুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে ১৩ জন আহত হন। এ নিয়ে মুজিবনগর থানায় দুই পক্ষই মামলা করে। তখন আমাম হোসেনের কর্মী মহজনপুর ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে রফিকুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের নামে মামলা করেন। ওই ঘটনার জেরে গোলাম মোস্তফার সাড়ে ৮ বিঘা জমির ফল ও ফসল কেটে তছরুপ করা হয় বলে তাঁদের ধারণা।
গোলাম মোস্তফা বলেন, গত শনিবারও তিনি খেতে কাজ করেছেন। রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা এ কাজ করেছে। রোববার সকালে জমির কলা, ফুলকপি, পেঁপেগাছ কাটা পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় কৃষকেরা। পরে তাঁকে খবর দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি রোববার সন্ধ্যায় বাদী হয়ে মুজিবনগর থানায় অজ্ঞাত ১২ জনের নামে মামলা করেন। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। তবে রফিকুল ইসলামের কর্মী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব আছে। তিনি তাঁকেই সন্দেহ করছেন।
মহজনপুর বাজারে গিয়ে এক চায়ের দোকানে বসা সাত খেত নষ্ট করা নিয়েই কথা বলছিলেন। তাঁরা বলেন, গত ২৬ এপ্রিল এই বাজারে আমাম হোসেন ও রফিকুল ইসলামের নির্বাচনী প্রচারণাকেন্দ্র থেকে মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। যেহেতু উভয় পক্ষই আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক, সে কারণে পুলিশ তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। গোলাম মোস্তফার ফসল নষ্ট হওয়ার পর এলাকায় আবারও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। যেকোনো সময় আবার সংঘর্ষ হতে পারে।
গোলাম মোস্তফার সন্দেহের বিষয়ে কথা বলতে হেলাল উদ্দিনকে মুঠোফোনে মহজনপুর বাজারের চায়ের দোকানে ডেকে আনা হয়। আসার পর হেলাল বলেন, ‘গোলাম মোস্তফা আমাম হোসেনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করেন। আর আমরা রফিকুল ইসলামে পক্ষে প্রচারণা করি। সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের সময় আমাদের সংঘর্ষ হয়। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে। তাঁর ফসল নষ্টের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এখানে গ্রামের কোনো তৃতীয় পক্ষ এমন জঘন্য কাজ করে থাকতে পারে। যাতে করে উভয় পক্ষ আবারও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এলাকায় অশান্তি শুরু হয়।’
মুজিবনগর সদর উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আমাম হোসেন বলেন, তাঁর সমর্থক গোলাম মোস্তফার সংসার চলে কৃষিকাজ করে। তাঁর এই সাড়ে ৮ বিঘা জমির ফসল রাতের আঁধারে কেটে নষ্ট করেছে যারা, তাঁদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। তারা যে দলই করুক না কেন, অপরাধীর বিচার করতে হবে। তা না হলে এলাকায় আবারও সহিংস ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে।
উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘নির্বাচনে পরে ওই এলাকায় আর যাওয়া হয়নি। এ ঘটনায় যারাই জড়িত পুলিশ তাদের খুঁজে বের করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এতে প্রকৃত ঘটনা জনগণের সামনে আসবে।’