ঝরনা ও গিরিখাত দেখতে মিরসরাই এসে কেন পথ হারাচ্ছেন পর্যটকেরা
মনোরম পাহাড়ি ঝরনা ও গিরিখাতের জন্য দেশের পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চট্টগ্রামের মিরসরাই। তবে ঝরনা ও গিরিখাত দেখতে এসে পর্যটকদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই।
গত দেড় মাসে মিরসরাইয়ের দুটি পর্যটন এলাকার গহিন জঙ্গলে ৩টি দলের ১৫ জন পর্যটক হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের সবাইকে উদ্ধার করা গেলেও এসব ঘটনায় চিন্তিত বন বিভাগ, ইজারাদার ও পুলিশ।
মিরসরাইয়ে পর্যটক হারিয়ে যাওয়ার সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে ২৭ এপ্রিল খৈয়াছড়া ঝরনায়। ঢাকা থেকে আসা পাঁচ পর্যটক ঝরনার ওপরে উঠে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে দিক ভুল করে হারিয়ে যান বনের গভীরে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) খবর পেয়ে রাত সাড়ে নয়টায় তাদের উদ্ধার করে মিরসরাই থানার পুলিশ।
ঘুরতে এসে কেন বারবার পর্যটকেরা হারিয়ে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বারৈয়ারঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, পর্যটকদের অজ্ঞতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে যত বিপদ ঘটছে। ঝরনাগুলোয় ইজাদারদের মাধ্যমে গাইড সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকেরা গাইড ছাড়াই অচেনা জায়গাগুলোয় ঘুরতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লা গালিব। খৈয়াছড়া ঘুরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলো এখন পর্যটনের বড় জায়গা। পর্যটকদের দিকনির্দেশনা ও নিরাপত্তার জন্য এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। তবে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সবার জন্য গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক করার বিপক্ষে তিনি। তাঁর মতে, এতে যে টাকা খরচ হয়, তা বহন করার সামর্থ্য সবার নেই।
মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়ারঢালা রেঞ্জ এলাকার খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, সহস্রধারা, লবণাক্ষ, সোনাইছড়ি, বাওয়াছড়া ও রূপসী ঝরনা—এ সাত পর্যটনস্থান ইজারা দেওয়া আছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়। সম্প্রতি জোরারগঞ্জ রেঞ্জের আওতায় মেলখুম গিরিখাতটি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এখনো সেটি সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হয়নি। ফলে, এ স্থানে নেই বন বিভাগের কোনো ব্যবস্থাপনা।
এর আগে জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মেলকুম গিরিখাতে গত ১৪ মার্চ ও ২৪ এপ্রিল পর্যটকদের পথ ভুলে হারানোর ঘটনা ঘটে। দুই দফায় হারিয়ে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধার করে জোরারগঞ্জ থানার পুলিশ। জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেলকুম গিরিখাতটি দুর্গম এলাকায় হওয়ায় দিনের আলো কমে গেলেই পর্যটকেরা দিক ভুল করেন। অভিজ্ঞ গাইড ছাড়া এ স্থানে না যেতে পর্যটকদের অনুরোধ করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
বারৈয়ারঢালা রেঞ্জের সব কটি ঝরনা ও গিরিখাতের ইজারা পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এএইচ এন্টারপ্রাইজ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল হাসান বলেন, ‘ঝরনা এলাকাগুলোয় সতর্কবার্তা–সংবলিত ব্যানার ও সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে। কিন্তু পর্যটকেরা কোনো নিয়ম মানেন না। আমরা সবাইকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে ঝরনা এলাকা ত্যাগ করতে বললেও অনেকে সন্ধ্যা করে ফিরতে গিয়ে বিপদে পড়েন। এলাকাগুলোয় ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হতো।’
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন প্রথম আলোকে বলেন, মেলকুম ট্রেইলের ব্যবস্থাপনায় কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এটিকে যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে। আর যত দিন এ ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না, তত দিন ট্রেইলে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রাখা হবে।