গাইবান্ধা
চুরি হচ্ছে পরিত্যক্ত দুই রেললাইনের সরঞ্জাম
বোনারপাড়া থেকে তিস্তামুখঘাট এবং ত্রিমোহিনী থেকে বালাসি ঘাট পর্যন্ত মোট ২৪ কিলোমিটার পরিত্যক্ত।
তদারকির অভাব ও অবহেলায় গাইবান্ধার পরিত্যক্ত দুটি রেলপথের (ঘাটলাইন) সরঞ্জাম চুরি যাচ্ছে। দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে খুলে নিয়ে যাচ্ছে রেললাইনের স্লিপার, ফিশপ্লেট ও নাট-বল্টু। অনেক স্থানে রেললাইনই চুরি গেছে।
গাইবান্ধা রেলস্টেশন সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৮ সালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত নৌরুট চালু হয়। এ জন্য সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলরুটের সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া স্টেশন থেকে তিস্তামুখঘাট পর্যন্ত অতিরিক্ত রেলপথসহ (ইয়ার্ড লাইন) ১২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ স্থাপন করা হয়। তখন থেকে তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ রুটের মাধ্যমে ঢাকা-দিনাজপুর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। উত্তরাঞ্চলের আট জেলার মানুষ ট্রেনে করে তিস্তামুখ ঘাটে যেতেন। এরপর তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি পারাপার হতেন। ওপারে বাহাদুরাবাদে গিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকায় যেতেন। সে সময় ঢাকার সঙ্গে উত্তরের আট জেলার দূরত্ব দুই-তিন ঘণ্টা কমেছিল। ১৯৯০ সালে নদীর নাব্যতা-সংকটের কারণে ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাটটি একই উপজেলার বালাসিতে স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকে প্রায় ৩৩ বছর ধরে রেলপথটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
এদিকে গাইবান্ধার পার্শ্ববর্তী ত্রিমোহিনী স্টেশন থেকে বালাসি ঘাট পর্যন্ত অতিরিক্ত রেলপথসহ (ইয়ার্ড লাইন) ১২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মিত হয়। এ লাইন নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তখন থেকে বালাসি-বাহাদুরাবাদ রুটের মাধ্যমে একইভাবে রেল যোগাযোগব্যবস্থা চালু ছিল। ১৯৯৬ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা হ্রাসের কারণে বালাসি-বাহাদুরাবাদ রুটে রেলওয়ের ফেরি চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়। এর মধ্যে ১৯৯৮ সালের জুনে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হয়। ফলে ২০০০ সাল থেকে এ রুটেও রেলের ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য বর্তমানে এ নৌরুটে লঞ্চ সার্ভিস চালু করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। এরপর ২০০০ সাল থেকে প্রায় ২৩ বছর ত্রিমোহিনী-বালাসি রেলপথ পরিত্যক্ত রয়েছে। দুটি রেলপথে মোট প্রায় ২৪ কিলোমিটার রেলপথ এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, ওই দুটি রেলপথের অনেক স্থানে কাঠের স্লিপার নেই। কিছু স্লিপার পচে নষ্ট হয়ে গেছে। বেশির ভাগ রেললাইন মাটির নিচে চাপা পড়েছে। অবশিষ্ট লাইনের নিচে মাটি নেই, অনেক জায়গায় জঙ্গলে ঢেকে গেছে লাইন। ফিশপ্লেট, নাট-বল্টু, স্লিপারের মতো গুরুত্বপূর্ণ মালামালের কোনো অস্তিত্ব নেই। রেলপথের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েক কিলোমিটার লাইন কাটা। বিশেষত ত্রিমোহিনী-বালাসি রেলপথের কঞ্চিপাড়া, মধ্যকঞ্চিপাড়া, বালাসি ও বোনারপাড়া তিস্তামুখ রেলপথের গজারিয়া, উল্লা ভারতখালী এলাকা থেকে বেশি মালামাল চুরি গেছে। বালাসি-সংলগ্ন এলাকায় রেললাইনের ওপর অনেক পরিবার ঘরবাড়ি তৈরি করেছে।
মধ্যকঞ্চিপাড়া গ্রামের শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন (৫০) বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব ও অবহেলায় ত্রিমোহনী-বালাসি ঘাটের রেলপথের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কাঠের স্লিপার পচে গেছে। দুটি রেলপথ এখন অবহেলায় পড়ে আছে। নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। দেখার কেউ নেই।
রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের অধীন গাইবান্ধার এই রেলপথ দুটির দেখভালের দায়িত্ব বাংলাদেশ রেলওয়ের বোনারপাড়া ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের। এই কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মাজেদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বোনারপাড়া-তিস্তামুখ ঘাট রেলপথ দেখাশোনার জন্য একজন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। তারপরও কীভাবে চুরি হচ্ছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
নিরাপত্তাকর্মী তাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
উপসহকারী প্রকৌশলী মাজেদুল ইসলাম বলেন, ত্রিমোহনী-বালাসি রেলপথ গুটিয়ে বা রেলপথ উঠিয়ে নেওয়ার জন্য রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিম অঞ্চলের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে রেলপথটি গুটিয়ে নেওয়া হবে। কী পরিমাণ টাকার মালামাল চুরি গেছে, তা বলা যাচ্ছে না।