‘আর হরে-লোদে সন্দ্বীপ যাইতে হবে না’

জোসনা বেগম (মাঝখানে)ছবি: প্রথম আলো

‘আগে হরে-লোদে ডুবিচুবি সন্দ্বীপ যাইতাম। একবার তো নৌকাতুন জাজে উডনের সময় হানিত হরি গেছিলাম। মরি যাইতাম গই, মাইনষে টানি তুলছিল। অন জোতা হাদ-দি যাইতাম হারির।’ (আগে কাদাপানি মাড়িয়ে সন্দ্বীপ যেতাম। একবার নৌকা থেকে জাহাজে ওঠার সময় পানিতে পড়ে গিয়েছিলাম। মারা যেতাম, মানুষ টেনে তুলেছিল। এখন জুতা পায়ে দিয়ে যেতে পারছি।)

কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সন্তোষপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জোসনা বেগম (৬০)। ঢাকায় মেয়ের বাসা থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, আজ সোমবার ভোরে গাড়ি তাঁকে কুমিরা ফেরিঘাটে নামিয়ে দেয়। এরপর ঘাটে গিয়ে তিনি শুনতে পান বাঁশবাড়িয়া ঘাটে ফেরি উদ্বোধন করা হবে। বিনা খরচে যাওয়া যাবে। সে জন্য তিনি কুমিরা থেকে আবার বাঁশবাড়িয়া ঘাটে এসে ফেরিতে উঠেছেন।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ও সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া নৌপথে প্রথমবারের মতো ফেরি চলাচল শুরু হয় আজ সকাল থেকে। সকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ফেরি সার্ভিস চালু করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও ছয় উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার দুজন বিশেষ সহকারী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ১৯ মার্চ থেকে এই নৌপথে পরীক্ষামূলকভাবে ফেরি চলাচল করছিল।

নাসরিন আক্তার নামের অপর যাত্রী জানান, কয়েক দিন পর ঈদ। কিন্তু তাঁর কাছে আজই ঈদের মনে হচ্ছে। নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে কখনো সন্দ্বীপে যাবেন, তা তিনি ভাবেননি। আজ তিনি সন্দ্বীপের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন।

এলাকায় লোকাল গাড়ি চলবে। এতে যাতায়াত খরচ কমে যাবে। তাই অত্যন্ত খুশি সন্দ্বীপ উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাঁর ৫৫ বছর বয়সে একসঙ্গে এত বাস-ট্রাক-প্রাইভেট কার দেখেননি। ফেরি উদ্বোধনে মন্ত্রীরা আসবেন, তাই তিনিও উপজেলায় ভিড় করছেন।

সন্দ্বীপের সন্তোষপুর এলাকায় কৃষিকাজ করেন নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আই ২০ টিয়া ভাড়াতুন ঘাটদি আইযাই। ৫০০টিয়া ভাড়াও দেখছি। বুকসমান, কোমরসমান হানিত নামাই দিত। হরে-লোদে যাইতো–অইতো। কত কষ্ট গৈরতাম। ঘাডে আছিল সিন্ডিকেট। অন নাই।’ (আমি ২০ টাকা ভাড়ায় ঘাটে আসা-যাওয়া করি। ৫০০ টাকা ভাড়াও দেখেছি। বুকসমান, কোমরসমান পানিতে নামিয়ে দিত। কাদাপানি মাড়িয়ে যেতে হতো। কত কষ্ট করতাম। ঘাটে সিন্ডিকেট ছিল। এখন নাই।)

উদ্বোধন উপলক্ষে সাজানো হয় ঘাট ও ফেরি। আজ সকালে
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের একটি রুলিং মিল কারখানায় চাকরি করেন মুছাপুরের বাসিন্দা আবদুল কাদের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্দ্বীপের সবকিছুর দাম বেশি। কারণ, মালামাল পরিবহনে খরচ বেশি পড়ে যেত। এখন ফেরির কারণে পণ্যের পরিবহন খরচ কমে আসবে। জিনিসের দাম কমবে। এ ছাড়া মানুষ বাসে করে সন্দ্বীপ থেকে ঢাকা যাবে। তারা অত্যন্ত খুশি। তবে শঙ্কাও আছে। কারণ, কুমিরা গুপ্তছড়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীবাহী জাহাজ থাকলেও সিন্ডিকেট করে নানা অজুহাতে জাহাজ বন্ধ করে রাখা হতো। ফলে মানুষ বাধ্য হতো বেশি টাকা দিয়ে স্পিডবোট নামক ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে চলাচল করতে। এখন এ রকম অজুহাতে যেন ফেরি বন্ধ না হয়।’