আওয়ামী লীগের সমর্থক ব্যবসায়ীর সংবর্ধনায় জামায়াত-বিএনপি নেতারা, ক্ষুব্ধ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

ফেনীতে সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী এম সাখাওয়াত খান। গত বৃহস্পতিবার তোলাছবি প্রথম আলো

সরকারের বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হওয়ায় ফেনীতে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে এম সাখাওয়াত খান নামের এক ব্যবসায়ীকে। গত বৃহস্পতিবার রাতে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় ‘আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন’–এর ব্যানারে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার মুখে পড়েন উপস্থিত ব্যক্তিরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সাখাওয়াত আওয়ামী লীগের সমর্থক। তিনি কাতার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে প্রকাশ্যে এভাবে সম্মাননা জানানো এবং এতে প্রশাসনসহ জামায়াত-বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা এম সাখাওয়াত খান ২০২৩ সালে কাতার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। গত ডিসেম্বর মাসে সাখাওয়াত বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হন। এ জন্য সাপ্তাহিক আলোকিত ফেনীর অঙ্গসংগঠন আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন তাঁকে সংবর্ধনা দেয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল, জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় সুরা সদস্য মুফতি আবদুল হান্নান, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক এস এস আর মাসুদ রানা, ফেনী জেলা ব্যাংকার্স ফোরামের সভাপতি সামছুল করিম মজুমদার প্রমুখ।

আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাসসের জেলা সংবাদদাতা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও শিক্ষক নেতা মোর্শেদ হোসেনের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মহিউদ্দির খোন্দকার, সদর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির, জেলা ছাত্রদল সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন, শিক্ষক নেতা তৌহিদুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ।

ফেসবুকে সংবর্ধনা নিয়ে এক ব্যক্তির পোস্ট। এতে সাখাওয়াতকে আওয়ামী লীগে নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে
ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।
সংবর্ধনা নিয়ে ক্ষুব্ধ এক যুবকের পোস্ট।

যা বলছেন অংশ নেওয়া অতিথিরা

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ‘আমাকে আমন্ত্রণ করার সময় বলা হয়েছে ডিসি-এসপি থাকবেন। আমি অনুষ্ঠানের ভেন্যুতে যাওয়ার পরপরই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত হন। ওই সময়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া আমি সিআইপি সাখাওয়াতকে চিনি না। এখন আমি নিজেই বিব্রত বোধ করছি।’

অতিথি হওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে জেলা জামায়াতের আমির মুফতি আবদুল হান্নানকে মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের কাছে অতিথি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন সিআইপিকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে, যিনি দেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন, সে জন্য অতিথি হয়েছি। সংবর্ধিত ব্যক্তি ফেনী বা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে নেই। তিনি দেশের বাইরে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এটি আমার জানা ছিল না। অনুষ্ঠানে আমি ছাড়াও ডিসি, বিএনপি-জামায়াতের নেতারা ছিলেন। তবে এ নিয়ে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এমন অনুষ্ঠানে আমার যাওয়া উচিত হয়নি। ভবিষ্যতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আরও সতর্কতা অবলম্বন করব।’

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রচারণামূলক পোস্টারে ব্যবসায়ী এম সাখাওয়াত খান
ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী নেতারা যা বলছেন

এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনীর সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম বলেন, ‘বিগত সময়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দেশ-বিদেশের অনেকের হাত ছিল। অস্ত্র কেনার জন্য অনেকেই অর্থের জোগান দিত। আওয়ামী লীগ নেতাকে সংবর্ধনা দেওয়া মানে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা। এ রকম আওয়ামী নেতাদের পুনর্বাসন কারা করছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার আগে প্রশাসনের লোকদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। আয়োজকদের জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে। তাদের উদ্দেশ্য জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে। না হলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’

অভিযোগের বিষয়ে এম সাখাওয়াত খান বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে আমি কাতারে ব্যবসা করছি। আমি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কারও ক্ষতি করিনি। আমি সব সময় মানুষের উপকার করেছি। আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া তো অপরাধ নয়। এতে অতিথিদের বিব্রত করার কোনো কারণ দেখছি না।’