‘বিদেশ যেতে আইইএলটিএস আর বলী সিনেমায় লেগেছে সিএলটিএস’

বলী চলচ্চিত্রের পরিচালকের সঙ্গে অভিনেতা–অভিনেত্রীরা। আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের চকবাজারের বালি আর্কেডের স্টার সিনেপ্লেক্সেজুয়েল শীল

পড়াশোনা বা চাকরির জন্য যাঁরা ইউরোপ কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় যেতে চান, তাঁরা আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম) পরীক্ষার সঙ্গে পরিচিত। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের এই পরীক্ষার মতো ‘বলী’ চলচ্চিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্যও একটি পরীক্ষা নাকি ছিল। আইইএলটিএসের সঙ্গে মিলিয়ে সেটির নাম সিএলটিএস দিয়েছেন চলচ্চিত্রের কুশীলবেরা। এখানে ইংলিশের জায়গায় বসবে চাটগাঁইয়া ভাষা।

‘বলী’ চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী প্রিয়াম অর্চি হাসতে হাসতে রসিকতার ছলে এ কথা বললেন। তিনি বললেন, ‘এই সিনেমায় সুযোগ পাওয়ার প্রথম শর্ত ছিল সিএলটিএস। আপনাকে চট্টগ্রামের ভাষায় পারদর্শী হতে হবে। চট্টগ্রামের ভাষা আপনার ভেতরে থাকতে হবে। কিছু সিনেমা আপনি দেখবেন, যেগুলো চট্টগ্রামের ভাষায় করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য হয় না। এই জায়গায় আমাদের পরিচালক কোনো ছাড় দেননি। সবারই সিএলটিএস লেগেছে।’

আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় চট্টগ্রাম নগরের বালি আর্কেডের স্টার সিনেপ্লেক্সে কথা হয় প্রিয়ামের সঙ্গে। ‘বলী’র প্রদর্শনী উপলক্ষে দর্শকদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে প্রিয়ামের সঙ্গে এসেছিলেন চলচ্চিত্রের পরিচালক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী, তারকা অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান, ইতমাম ও এনজেল। সিনেমাপ্রেমী দর্শকেরা প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একনজর দেখতে ভিড় জমিয়েছেন। তবে সবার নজরে ছিলেন চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা চট্টগ্রামের নাসির উদ্দিন খান। ছবি তোলা আর দর্শকদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে ‘বলী’ নিয়ে তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির কথা জানিয়েছেন প্রথম আলোকে।

মুক্তির আগে থেকেই আলোচনায় ছিল চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির আবহে নির্মিত এই চলচ্চিত্র। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকারের অনুদান পেয়েছিল এটি। পরের বছরই চট্টগ্রামের বাঁশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুরু হয় সিনেমাটির শুটিং। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেন্সর সার্টিফিকেশন সনদ পায় এটি। চলতি ৭ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রেক্ষাগৃহে এটি মুক্তি পেয়েছে। ইতিমধ্যে বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কারও জিতেছে। বাংলাদেশ থেকে এবার অস্কারেও প্রতিনিধিত্ব করেছে ‘বলী’।

স্টারর সিনেপ্লেক্সে বলীর পোস্টারের সামনে অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান ও পরিচালক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী
জুয়েল শীল

চলচ্চিত্রের পরিচালক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী, প্রযোজক পিপলু আর খান, নাসির উদ্দিন খান—এঁরা সবাই চট্টগ্রামের সন্তান। তাই একটা অন্য রকম রসায়ন ছিল পর্দায়ও। সে প্রসঙ্গ তুলতেই নাসির উদ্দিন খান একবাক্যে স্বীকার করে নিলেন। বললেন, ‘চট্টগ্রামের ভাষায় অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোতে একটা বাণিজ্যিক বিষয় থাকে। “বলী”তে তা নেই। এটি অনেক ধীর, স্থির। চট্টগ্রামের মিথ, সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিকতা সবই মিলেমিশে রয়েছে “বলী”তে।’

প্রিয়ম অর্চি বলেন, ‘“বলী” অন্য রকম করে বলা একটি গল্প। এই সিনেমা আপনাকে ভাবাবে। এমন একটি সিনেমা, যেটি আপনি এইমাত্র দেখেই শেষ করে ফেলবেন তা নয়। এখানে বলী খেলা রয়েছে, চট্টগ্রামের ভাষা রয়েছে, সাগরপাড়ের মানুষের কথা আছে। এই কথাগুলো অন্য রকমভাবে বলা। সেই অন্য রকমটা কী, এটা বোঝার জন্য প্রেক্ষাগৃহে আসতে হবে।’

এ চলচ্চিত্র পর্দায় তুলে আনা সহজ ছিল না। পরিচালক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী কেমন করে সেসব বাধা ডিঙালেন, জানতে চাইলে বলেন, ‘এই ছবি আপনাকে বারবার দেখতে উদ্বুদ্ধ করবে। আমি এমনও দর্শককে দেখেছি, যাঁরা অষ্টমবার পর্যন্ত দেখেছেন। আমরা একটা দৃশ্যের কথা ভাবতে দুই বছরও সময় নিয়েছি। তাই আশা করি, এই চলচ্চিত্র চট্টগ্রামের মানুষ সাদরে গ্রহণ করবে।’

পরিচালক বলেন, ‘চট্টগ্রামের সবাই বলী খেলার কদর করে। বলী খেলার সময় এখানে একধরনের উত্তেজনা থাকে। সেই উত্তেজনা আমরা সিনেমাটি নির্মাণের সময় অনুভব করেছি। বলতে পারেন, চট্টগ্রামই এই সিনেমার অনুপ্রেরণা।’