বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় হামলার ঘটনায় পৃথক দুই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রধান আসামি মো. নুরুজ্জামানের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে নুরুজ্জামানের আট সহযোগীর প্রত্যেককে একটি মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার শুনানি শেষে বগুড়ার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩-এর বিচারক বেগম সঞ্চিতা ইসলাম এ আদেশ দেন।
মো. নুরুজ্জামান শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি শাজাহানপুরের ‘নুরু বাহিনীর’ প্রধান। ৬ এপ্রিল রাতে দলবদ্ধভাবে শাজাহানপুর থানায় ঢুকে অস্ত্র মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার মূল হোতা তিনি। ঘটনার পর নুরুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৫টি গুলিসহ ২টি বিদেশি পিস্তল, মাদক ও দেশি অস্ত্র জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৪৫ জনকে আসামি করে পৃথক আইনে দুটি মামলা হয়। দুটি মামলার প্রধান আসামি নুরুজ্জামান।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নুরুজ্জামানসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে আজ নয়জনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। নুরুজ্জামান ছাড়া রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক বোরহান উদ্দিন, আড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক (সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত) মিঠুন হাসান, কর্মী সাদ্দাম রবীন, রমজান আলী, মিরাজুল রহমান, আমিনুল ইসলাম ও মিঠুন মিঞা।
আদালত সূত্র জানায়, আসামিদের বাড়ি থেকে অস্ত্র ও গুলি জব্দের ঘটনায় অস্ত্র আইনে করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। ওই মামলার আরেক আসামি হাসান নাজমুল এখনো পলাতক। এ ছাড়া থানায় হামলার মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
বগুড়ার আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শুনানি শেষে অস্ত্র আইনের মামলায় নুরুজ্জামানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ ছাড়া থানায় হামলার মামলায় নুরুজ্জামানসহ অন্য আট আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
ভিডিওতে থাকলেও আসামি নন তিনি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে হামলার মূল হোতা নুরুজ্জামানের এক সহযোগীকে দফায় দফায় পুলিশের ওপর হামলা করতে দেখা গেছে। যদিও এ ঘটনায় করা মামলার আসামির তালিকায় তাঁর নাম নেই। এরপরও তদন্তের সময় তাঁকে আটকের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
১৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায় যে ঘটনার সময় মূল হোতা নুরুজ্জামানের সঙ্গে নীলাভ সবুজ (পেস্ট) রঙের পাঞ্জাবি পরা ও হাতে মুঠোফোন নিয়ে এক যুবক দফায় দফায় পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করছেন।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলার সময় নুরুজ্জামানের সঙ্গে আসা ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর নাম শামীম রেজা। তিনি শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের ঘাষিড়া গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে। ভুলক্রমে তাঁর নাম এজাহার থেকে বাদ পড়েছে। তদন্তের সময় ফুটেজ দেখে হামলায় তাঁর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়ে তাঁকে ধরতে অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে শামীম নুরু বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। কাগজে-কলমে চুয়াডাঙ্গায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত থাকলেও মাঝেমধ্যেই তাঁকে নুরুজ্জামানের সঙ্গে দেখা যায়। তাঁর পড়াশোনায় হাতেখড়ি আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া কাছেমুল উলুম জামিল মাদ্রাসায়। পরে তিনি সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। ছাত্রাবস্থায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়ান। পরে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০১৩-১৪ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্রদলের মিছিলেও তাঁকে দেখা গেছে। পরে তিনি নুরুজ্জামানের সহচর হন।
আরেক নেতাকে অব্যাহতি
থানায় হামলার ঘটনায় উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন হাসানকে সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গত রোববার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ কে এম জিয়াউল হকের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এর আগে ৭ এপ্রিল পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামানকে পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
মামলা ডিবিতে, গ্রেপ্তার ১৩
থানায় হামলার মামলাটির তদন্তভার থানা-পুলিশের কাছ থেকে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু ডিবি মামলার নথি বুঝে পেয়েছে গতকাল সোমবার। ইতিমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ডিবির পরিদর্শক মুস্তাফিজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, থানায় হামলার ঘটনায় মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র জব্দের ঘটনায় নুরুজ্জামান ও হাসান নাজমুলকে আসামি করে পৃথক আরেকটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় নুরুজ্জামানের ছয় দিন ও আট সহযোগীর প্রত্যেকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তিনি বলেন, মামলার তদন্তভার ৯ এপ্রিল ডিবিতে ন্যস্ত করা হলেও তারা নথি বুঝে পেয়েছে গতকাল। থানায় হামলার মামলার তদন্তভার ডিবির উপপরিদর্শক আবু জাফরকে ও অস্ত্র মামলার তদন্তভার উপপরিদর্শক আশিকুর রহমানের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।