বাঘায় সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দুই পক্ষের মারামারি, আহত ১৫

বাঘা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সামনে দলিললেখক সমিতির দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি বাধলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবার দুপুরে
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সামনে দলিল লেখক সমিতির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৫ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আজ সোমবার বেলা পৌনে ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করেনি।

দুই পক্ষের আহত ব্যক্তিরা হলেন শামিম হোসেন, মাজিদুল ইসলাম, সজল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, এনামুল হক, মুস্তোফা হোসেন, জয় হোসেন, শাহিন আলম, রাব্বি হোসেন, সনেট আহমেদ, পারভেজ হোসেন, সাইফুল ইসলাম, নাদিম হোসেন, সাজিত আহমেদ ও আনজারুল ইসলাম। তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বাঘা সাবরেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৬২ জন নিবন্ধিত দলিললেখক রয়েছেন। দলিললেখকদের সমিতি রয়েছে। সারা সপ্তাহে দলিললেখকেরা দলিল লিখে যে টাকা পান, তার পুরোটাই সমিতিতে জমা দিতে হয়। সমিতিই সপ্তাহান্তে প্রত্যেক দলিললেখককে তাঁর জমা দেওয়া টাকার ২৫ শতাংশ সম্মানী দিয়ে থাকে। সেই সঙ্গে সমিতিতে সবার জমা টাকার একটা অংশও পেয়ে থাকেন প্রত্যেক দলিললেখক।

দলিললেখকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে তাঁরা ঠিকমতো সম্মানীর টাকা পাচ্ছেন না। আগে উপজেলায় দলিল লেখক সমিতির নির্বাচন হতো। ২০১৯ সালের পর থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে এই সমিতির কমিটিগুলো হচ্ছে। গত শুক্রবার তৃতীয়বারের মতো এ রকম অনির্বাচিত একটি নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। নতুন কমিটি গতকাল রোববার প্রথম দিন দায়িত্ব পালন করেছে। আজ সোমবার সকালে দলিললেখক জহুরুল ইসলাম ওরফে স্বপন সমিতিতে টাকা জমা না দিয়েই চলে যেতে থাকেন। জহুরুল ইসলাম দলিল লেখক সমিতির সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির সভাপতি ছিলেন। সমিতির নতুন কমিটির সভাপতি শাহিনুর রহমান ওরফে পিন্টু জহুরুলকে টাকা দিয়ে যেতে বলেন। নইলে তিনি লাঞ্ছিত হতে পারেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। জহুরুল টাকা না দিয়ে উল্টো বলতে থাকেন, এই কমিটি তিনি মানেন না। নির্বাচন দিয়ে তিনি কমিটির নেতা হতে বলেন। নয়তো তিনি সমিতি তুলে দিয়ে দলিললেখকদের সম্মানীর ব্যবস্থা যাঁর যাঁর নিজেদের ওপর ছেড়ে দিতে বলেন। এরপর কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ জন আহত হন। এর মধ্যে ১০ জনকে বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ জন আহত হন। এর মধ্যে ১০ জনকে বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

জহুরুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালের পর সমিতির কোনো নির্বাচিত কমিটি নেই। এই অনির্বাচিত কমিটিগুলো দলিললেখকদের ঠিকমতো টাকাপয়সা দেয় না। অথচ তাঁর সময়ে তিনি দলিললেখকদের ঠিক সময়ে টাকা দিতেন। তাঁদের ছেলেমেয়েদের বিয়ের সময়ও টাকা দিতেন। জহুরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘শাহিনুর পক্ষই প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাঁদের ছেলেরা আমাদের ধাওয়া দেন। এতে আমাদের কয়েকজন আহত হয়েছেন।’

এ ব্যাপারে শাহিনুর রহমান বলেন, তিনি কমিটিতে আসার পর গতকাল প্রথম অফিস করেছেন। আজ তাঁর দ্বিতীয় দিন। এত দিন যাঁরা এই সমিতি চালিয়েছেন, তাঁরা কিছু দুর্নীতি করেছেন। তিনি ঈদের পর এগুলো নিয়ে বসবেন। কিন্তু সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম বিষয়টি মানতে চাননি। তিনি বহিরাগতদের নিয়ে এখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে এসব ইটপাটকেল পাল্টা নিক্ষেপ করা হয়। এতে তাঁদের বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় তাঁরা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান নতুন সভাপতি।

এ ব্যাপারে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, দলিল লেখক সমিতির দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় থানায় কেউ এখনো অভিযোগ দেয়নি।

এ বিষয়ে কথা বলতে সাবরেজিস্ট্রার এ এন নকিবুল আলমকে কল করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় আগে থেকেই তাঁরা সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সাবরেজিস্ট্রি অফিসও চালু ছিল।