১৬ মে থেকে চুয়াডাঙ্গার বাজারে আসছে পাকা আম

চুয়াডাঙ্গায় পরিপক্ব আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণে জন্য ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সোমবার
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় এ বছর ১৬ মে (জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় দিনে) থেকে পরিপক্ব আঁটি, গুটি ও বোম্বাই আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ শুরু হচ্ছে। কৃষি বিভাগ, আমচাষি ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসন এ সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।

সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ সভা হয়। জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পরিপক্ব আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণে জন্য ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ করা হয়। সে অনুযায়ী ১৬ মে থেকে আঁটি, গুটি ও বোম্বাই আম, ২৪ মে থেকে হিমসাগর, ৩০ মে থেকে ল্যাংড়া, ৭ জুন থেকে আম্রপালি (বারি আম-৩), ১৫ জুন থেকে ফজলি এবং ১ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হবে।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন বিনতে আজিজ, দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, জীবননগরের কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সজীব পাল, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা ফল ও আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রফাতুল্লাহ মহলদার ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম বক্তব্য দেন।

খুলনা বিভাগের আরেক জেলা সাতক্ষীরায় ৯ মে থেকে নতুন আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ শুরু হয়েছে। তবে কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় আবহাওয়া ও উৎপাদিত আমের বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে চুয়াডাঙ্গায় এই সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাতে পরিপক্ব আম বিক্রি করে কৃষকেরাও ন্যায্যমূল্য যেমন পাবেন, তেমনি ক্রেতারা ভালো মানের আমের স্বাদ নিতে পারবেন।

আরও পড়ুন

জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, গুণে-মানে সেরা চুয়াডাঙ্গার আমের সুনাম রয়েছে সারা দেশে। সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে সময় অনুসরণ করে আম সংগ্রহ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অপরিপক্ব আম পাড়া যাবে না। আম পাকানো বা সংরক্ষণে কোনো রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা যাবে না। অবৈধ উপায়ে আম পাকানো হলে বা পাকানোর উদ্দেশ্যে মজুত করা হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এবং নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে এ মৌসুমে আমের মুকুল বেশি আসেনি। এ ছাড়া ভরা মৌসুমে অতি তীব্র তাপপ্রবাহসহ নানা কারণে আমের ফলন কম হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি অন্তত এক মেট্রিক টন কম উৎপাদন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমচাষিদের আশঙ্কা, উৎপাদনের পরিমাণ আরও কম হতে পারে। বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফলন কম হওয়ায় আমের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। ভোক্তা পর্যায়ে এর দামেও প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুন

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে জেলায় সব মিলিয়ে ২ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। ফলন ভালো হওয়ায় (প্রতি হেক্টর বাগানে গড়ে ১৪ মেট্রিক টন হিসাবে) ৩৪ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর সেখানে আমের বাগানের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩০৪ হেক্টরে। বৈরী আবহাওয়াসহ নানা কারণে হেক্টরপ্রতি ফলনও কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১৩ মেট্রিক টন ধরে চলতি মৌসুমে ২৯ হাজার ৯৫২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হতে পারে, যা গত মৌসুমের তুলনায় ৪ হাজার ৫৫৮ মেট্রিক টন কম।

আরও পড়ুন

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সবুজপাড়ার বাসিন্দা রফাতুল্লাহ মহলদার চলতি মৌসুমে নিজের ৮ বিঘা জমিসহ মোট ১০০ বিঘা জমিতে এবার আম চাষ করছেন। তিনি জানান, গত বছর ৩০০ বিঘা জমিতে আম চাষ করেছিলেন। ওই বছরে তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় এবার বাগান ছোট করে আনেন। তিনি বলেন, ‘এবেড্ডা আম তৈইর কত্তি যত খরজ হয়েছে, তা তুলতি হলি প্রতি কেজি আম ১০ থেইকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্তি কত্তি হবে। নাহলি অনেক ট্যাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, মৌসুমের শুরুতেই মুকুল ঝরে যাওয়া, অব্যাহত তাপপ্রবাহের কারণে গুটি ঝরে যাওয়ায় এ বছর আমের উৎপাদন কম হবে।