ভারী বর্ষণে দিনাজপুর শহরে নালা উপচে সড়কে পানি, তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল
ছয় দিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের জনজীবন। শহরে ড্রেনের পানি উপচে পড়ছে রাস্তায়। বেশ কয়েকটি সড়কে হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠছে। শহরের বাইরে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। সেখানকার মানুষ আশ্রয় নিতে শুরু করেছে সড়কের পাশে।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আজ রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরে বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে ১৭২ মিলিমিটার। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি ছিল ৪৮ মিলিমিটার। আজ বেলা ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
আজ সকাল থেকে শহরের পুলহাট, রামনগর, সুইহারি, নিমনগর বালুবাড়ি, রুপম মোড়, অন্ধ হাফেজ মোড়, কালীতলা, বাহাদুর বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও সড়কে হাটু পর্যন্ত পানি জমে আছে। এর মধ্যে দিয়েই মানুষজন চলাচল করছে।
ঈদগাহ বস্তি এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ওয়ারিদ (৪২) বলেন, শহরে পানি জমে থাকার কোনো কারণ নেই। শহরের ড্রেনগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার করা হলে পানি নেমে যেত। এই ময়লা পানিতে অসুখ-বিসুখ ছড়াবে। এমনিতেই মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। তার ওপর অসুখে পড়লে কষ্টের সীমা থাকবে না।
শহরের মির্জাপুর গোয়ালপাড়া এলাকায় প্রায় দেড় শ পরিবারের বসবাস। অধিকাংশের ঘরে পর্যন্ত পানি প্রবেশ করেছে। তলিয়ে গেছে নদীতীরবর্তী গোবরাপাড়া, চাতরাপাড়া, ঈদগাহ বস্তি, কসবা এলাকায় হাঁটুপানি উঠছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারছেন না মানুষ।
টানা বর্ষণে জেলার সব কটি নদীতে থই থই করছে পানি। সব কটি নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি। বিভিন্ন জায়গায় ডুবেছে ফসলের মাঠ। বিশেষ করে আগাম শাকসবজির খেত নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রশাসন থেকে সতর্কবার্তা প্রদানসহ বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি ছিল না। এই বৃষ্টি কৃষির জন্য উপকার বয়ে আনল। আমনের ক্ষতি হবে না, তবে আগাম শাকসবজির চাষ যাঁরা করেছেন, তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। সেটাও বড় কোনো ক্ষতি হয়ে দাঁড়াবে না।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, আত্রাই নদের বিপৎসীমা ধরা হয় ৩৯ দশমিক ১৫ মিটার। সেখানে আজ সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৫৫ মিটার। একইভাবে পুনর্ভবা নদীর বিপৎসীমা ৩৩ দশমিক ৫ মিটার, সেখানে পানির উচ্চতা বর্তমানে ৩১ দশমিক ৯৬, ইছামতী নদীর বিপৎসীমা ২৯ দশমিক ৫০, সেখানে রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ দশমিক ৮৫। টাঙ্গন নদীর বিপৎসীমা ৩৪ দশমিক ৪৪০, সেখানে উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৩২ দশমিক ০৫ মিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সিদ্দিকুর জামান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নদীগুলোর খননকাজ করায় বন্যার আশঙ্কা কম। নদী খননের বালু নদের উভয় পাড়ে রাখায় সেগুলো রক্ষা বাঁধ হিসেবে কাজ করেছে। তবে নদীর জায়গা দখল করে নিম্নাঞ্চলে যাঁরা বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন, তাঁদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। আরও দু-এক দিন এভাবে বৃষ্টি হলে নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ভারতের বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। ফলে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ বেশ কিছু জায়গায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকবে।