মা–বাবার সমর্থনে সাইক্লিংয়ে দেশসেরা প্রিয়া
সমাজটা রক্ষণশীল, পরিবারে দারিদ্র্য। তবে মা–বাবার মনটা উদার। নিজের তুমুল আগ্রহ, পরিশ্রম আর মা–বাবার সমর্থনে তাই সব বাধা পেরিয়ে প্রিয়া খাতুন একজন চ্যাম্পিয়ন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এই কিশোরী এই অল্প বয়সে নিজের করে নিয়েছে খেলাধুলার শতাধিক পদক।
সম্প্রতি রাজশাহীতে হওয়া ৫২তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাইক্লিংয়ে মেয়েদের মধ্যে দেশসেরা হয়েছে যশোরের কেশবপুর উপজেলার রাজনগর বাকাবর্শী গ্রামের প্রিয়া খাতুন। একই আসরে হকিতে রানার্সআপ হয়েছে অধিনায়ক প্রিয়া ও তার দল।
ওই প্রতিযোগিতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আটজন প্রতিযোগী অংশ নেয়। প্রতিযোগিতা ছিল ৪০০ মিটারের সাইক্লিংয়ের। সেখানে প্রথম স্থান অধিকার করে প্রিয়া খাতুন।
কেশবপুরের রাজনগর বাকাবর্শী গ্রামের শাজাহান আলী মোড়লের মেয়ে প্রিয়া খাতুন। বাবা রাজনগর বাকাবর্শী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। মা লাকী বেগম গৃহস্থালির সবকিছু সামলান। গড়ভাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়া। তার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সহপাঠী ও শিক্ষকেরা।
প্রিয়ার বাবা শাজাহান আলী মোড়ল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের গ্রামটি অনেকটা রক্ষণশীল। মেয়েদের খেলাধুলাকে সেখানে সহজভাবে দেখা হয় না। তবু ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ছিল প্রিয়ার। ছেলেদের সঙ্গে একমাত্র মেয়ে হিসেবে ফুটবল খেলত সে। প্রাথমিক পর্যায়ে উচ্চ লাফ, দীর্ঘ লাফ, দৌড় প্রতিযোগিতার সব কটিতে প্রথম বা দ্বিতীয় হতো।
প্রিয়ার মা লাকী বেগম বলেন, তাঁদের গ্রামে মেয়ে হয়েও প্রিয়া কেন খেলাধুলা করে তা নিয়ে নানাজন নানা কথা বলে। তবে সেসবে পাত্তা না দিয়ে মেয়েকে আরও উৎসাহ দেন তাঁরা। প্রিয়ার স্বপ্ন জাতীয় নারী ফুটবল দলে খেলার। সে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চায়।
প্রিয়া খাতুনের খেলাধুলায় সাফল্যে নিজেদের গর্বের কথা জানান গড়ভাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপ্রভাত বসু। তিনি বলেন, ‘মা-বাবার উদার মানসিকতা আর আমাদের বিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা প্রিয়াকে সাফল্য এনে দিয়েছে। প্রিয়াকে জাতীয় দলে খেলার ব্যাপারে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।’
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তুহিন হোসেন বলেন, ‘প্রিয়াকে আমরা পৃষ্ঠপোষকতা দেব। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে যা যা করার দরকার, অবশ্যই তা করব। প্রিয়াকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’