ঈদের আগে বরিশালে ফিরবেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, বরণ করতে প্রস্তুত নেতা–কর্মীরা
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত এখনো বরিশালে ফেরেননি। তবে ঈদের আগে তিনি বরিশালে ফিরবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ কারণে তাঁকে বরিশালে বরণ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁর সর্মথক নেতা–কর্মীরা।
ঈদের পর বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ যৌথ বর্ধিত সভা করবে। সেখানে আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে নামার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে দলীয় নেতারা আভাস দিয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, আমাদের তাঁর পক্ষে কাজ করতে হবে। আমরা তাঁকেই সমর্থন করি এবং করব। এ জন্য ঈদের পরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের একটি যৌথ বর্ধিত সভা করা হবে। সেখানে কীভাবে দল প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে, সেটি আলাপ-আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।’
গতকাল রোববার টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে যান আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন আবুল খায়ের। এ ছাড়া দলীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের যাবতীয় নির্দেশনা নেবেন। এরপর ঈদের আগেই বরিশালে ফিরবেন তিনি।
আজ বিকেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরিশালে কবে ফিরব, সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এখানে প্রস্তুতিমূলক কিছু কাজ রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন করতে একটু সময় লাগছে। তবে আগামীকাল হয়তো নিশ্চিত করে বলা যাবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তিনি বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই এবং বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা।
রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠলেও রাজনীতিতে কখনো সক্রিয় ছিলেন না আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তাঁর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পেছনের সমীকরণটা মেলাতে পারছেন না বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থকেরা। তাঁদের আর আগের মতো শহরে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ সাদিক আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। গত পাঁচ বছরে তিনি নিজের সমর্থকদের নিয়ে নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাঁর বাবা সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বর্ষীয়ান এই নেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ১ নম্বর সদস্য। ফলে জেলা আওয়ামী লীগও সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে। এ কারণে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাদিক আবদুল্লাহকে একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব করেছিল।
তবে সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালে দলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বড় একটি অংশ দল থেকে ছিটকে পড়ে। অংশটি প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
এ ছাড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থক একটি অংশ রয়েছে। আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মনোনয়ন পাওয়ায় এই দুই অংশই এখন আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের কতটা আন্তরিক সমর্থন পাবেন, এ প্রশ্নও এখন নগরজুড়ে আলোচনা হচ্ছে।
বরিশাল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, আবুল খায়ের আবদুল্লাহ জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী। দল তাঁর পক্ষে কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে যে জনমতের জোয়ার, তাতে ভোটাররাই তাঁর কর্মী হিসেবে কাজ করবেন। প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের এখন আর দলে পদ–পদবি নেই। নির্বাচনী মাঠে তাঁরাই দলের পক্ষে সবচেয়ে বেশি কাজ করেন। বিশাল অংশটি আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে মাঠে নেমে গেছে।