রাঙামাটির শ্রমিক লীগ নেতাকে ধাওয়া করে রাউজানে এনে কুপিয়ে হত্যা
রাঙামাটি জেলার কাউখালীর শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল মান্নানকে (২৭) কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এই হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে পরিবারের দাবি। গতকাল বুধবার বিকেলে রাঙামাটির কাউখালী থেকে অটোরিকশায় পালানোর সময় তাঁকে ধাওয়া দিয়ে পাশের উপজেলা চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার চারা বটতল বাজারে এনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত আবদুল মান্নান রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ওই ইউনিয়নের সুগার মিল ডাকবাংলো এলাকার কবির আহাম্মদের ছেলে।
গতকাল সন্ধ্যায় বটতল বাজারের রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে স্বজনরা তাঁর লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে কাউখালী থানা-পুলিশ বাড়ি থেকে লাশ নিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারকে হস্তান্তর করে পুলিশ৷ এরপর আজ বেলা তিনটায় জানাজা শেষে স্থানীয় পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল কাউখালীর চায়েরী বাজারের সাপ্তাহিক হাটের দিন ছিল। এ দিন বাজার করতে আসা বেশ কয়েকজনকে মারধর করে দুর্বৃত্তরা।
বাজারে লোকজনকে মারধর করার খবর শুনে বাড়ি থেকে একটি অটোরিকশায় নিরাপদ জায়গায় যাচ্ছিলেন আবদুল মান্নান। তিনি চায়েরীবাজার হয়ে রাউজানে উপজেলার গোদার পাড়ে আসেন। এ সময় তাঁকে অটোরিকশায় দেখে একদল মোটরসাইকেলে পিছু নেয়। রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারা বটতল বাজার এলাকায় পৌঁছালে ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি আবদুল মান্নানকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে মারধরের পর কোপায়। এরপর সড়কের পাশের ঝোপে তাকে ফেলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
পরে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে আবদুল মান্নানকে উদ্ধার করে রাউজান গহিরার জে কে মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে ৬ আগস্ট কাউখালীর শহীদুল ইসলাম নামে ছাত্রলীগের আরেক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাইন বাগান ত্রিপুরা দিঘি এলাকায়। এ নিয়ে সরকার পতনের পর কাউখালীর ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের দুজন নেতাকে হত্যা করা হলো।
নিহত আবদুল মান্নানের ভায়রা কোরবান আলী জানিয়েছেন, মান্নানের বুকে এবং বাম হাতে ধারালো অস্ত্রের জখমের চিহ্ন আছে। কারা তাঁকে হত্যা করেছে, এ ব্যাপারে তিনি সঠিক বলতে পারছেন না।
বেতবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুহাম্মদ মনির উদ্দিন আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, সরকার পতনের পর থেকে তাঁরা আর এলাকায় নেই। থাকতেও পারছেন না। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আবদুল মান্নানকে হত্যা করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।
কাউখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কাউখালীর শ্রমিক লীগ নেতাকে হত্যার নিন্দা জানান। তাঁরা বলেন, শান্তিপূর্ণ এলাকায় যাঁরা অশান্তি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে, তাঁদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে রাউজান থানার ওসি জাহিদ হোসাইনকে ফোন করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানান। ঘটনা জানতে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এরপর দায়িত্বরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও কেউই ধরেননি।
রাঙামাটির কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজীব চন্দ্র কর প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি রাউজান থানার অধীনে হওয়ায় সে থানাকেই এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে লাশ বাড়িতে আনার খবর পেয়ে গতকাল রাতে আমরা লাশের ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠাই। আজ দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য হস্তান্তর করি।’